বিএনপিবিহীন উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ
বড় ধরনের কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ পর্ব। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সারা দেশে ১২ জেলার ৭৮ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়েছে।
এর পরই কেন্দ্রে কেন্দ্রে গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা। ভোট শেষে ঢাকার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা মেজর রাজু জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ২৪টি ভোটকেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
মেজর রাজু আরো বলেন, এর মধ্যে কুড়িগ্রামের ১২টি, লালমনিরহাটের একটি, সিরাজগঞ্জের তিনটি, সুনামগঞ্জের পাঁচটি, রাজশাহীর একটি আর হবিগঞ্জের দুটি কেন্দ্র রয়েছে।
বিএনপি, বামপন্থী দলগুলোসহ অনেক রাজনৈতিক দলই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনী আমেজ-উত্তেজনা পাওয়া যায়নি বলে বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। এর ফলস্বরূপ, প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৮ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন রয়েছেন। এরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
এই অবস্থার মধ্যেও আজ সকালে ভোট শুরুর পর বেশ কিছু জায়গায় অনিয়মের অভিযোগে ভোটকেন্দ্র স্থগিতের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির অভিযোগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় তিন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। কিছু কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে জেলাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, ভোটারের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
এই নির্বাচন উপলক্ষে রোববার সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও ভোট হচ্ছে ৭৮টি উপজেলায়। আদালতের আদেশে তিনটি ও নির্বাচন কমিশন তিনটি উপজেলার ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে। এ ছাড়া তিনটি উপজেলার সব পদে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন পড়বে না।
এসব উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র পাঁচ হাজার ৮৪৭টি। চেয়ারম্যান পদে ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৩৮৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাজশাহী থেকে আমাদের প্রতিনিধি শ. ম সাজু জানিয়েছেন, সেখানকার গোদাগাড়ী উপজেলার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। দুপুরে উপজেলার আল জামিয়াতুস সালাফিয়া আলিম মাদ্রাসাকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ সময় কেন্দ্র থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
আটকদের মধ্যে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং দুজন পোলিং এজেন্ট রয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মশিউর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে শরীফুল ইসলাম ইন্না জানিয়েছেন, ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারার অভিযোগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি কেন্দ্রের তিন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণও স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বেল্লাল হোসেন ও আলীম শেখ।
অপরদিকে ভোটে অনিয়মের অভিযোগে শাহজাদপুর উপজেলার শ্রীফলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কৈজুড়ি ইউনিয়নের মহিউল ইসলাম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বলে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুসাইন খান দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জ থেকে প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, জেলার বানিয়াচং উপজেলার শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী জানিয়েছেন, জেলায় অনিয়মের অভিযোগে তিন উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে শাল্লা উপজেলার কাশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধর্মপাশা উপজেলার সরিষাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুগনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তাহিরপুর উপজেলায় একটি কেন্দ্র।