গ্যাসের দাম ২১১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব তিতাসের
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ, শিল্প ও মোটরযানসহ অন্যান্য গ্রাহক পর্যায়ে ২১১ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে এক চুলা ব্যবহারকারীদের প্রতি মাসে ৭৫০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার ৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য মাসপ্রতি ৮০০ টাকার জায়গায় এক হাজার ৪৪০ টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে মিটার থাকা গ্রাহকদের প্রতি ঘনফুট (প্রতি ইউনিট) গ্যাসের মূল্য হিসেবে ৯ দশমিক ১০ টাকার বদলে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে রাজধানীর টিসিবি মিলনায়তনে চলমান গণশুনানিতে আজ মঙ্গলবার তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, আমদানিকৃত ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) গ্রাহকদের সরবরাহের ফলে কোম্পানির যে ক্ষতি হবে তাতে ভারসাম্য আনতে তাঁরা এ প্রস্তাব দিয়েছেন।
তবে আয়-ব্যয়ের নানান তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে এই প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। বিইআরসি আইন মেনে মূল্যায়ন করেনি বলেই এই গণশুনানির আয়োজন করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণে সরকারের এলএনজি আমদানির ফলে ব্যয় কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন বিতরণকারী কোম্পানি গ্যাসের দাম বাড়ানোর যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী গণশুনানি করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বর্তমানে সরকার ৫০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন কিউবিক ফিট পার ডে) এলএনজি আমদানি করছে। আগামী এপ্রিল থেকে তা এক হাজার এমএমসিএফডিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে সংস্থার অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে ৯০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিইআরসি।
তিতাসের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রকে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩ দশমিক ১৬ টাকার পরিবর্তে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা দিতে হবে। দাম বাড়বে ২০৮ শতাংশ। অন্যদিকে সার কারখানাকে প্রতি ইউনিটে ২ দশমিক ৭১ টাকার বদলে ৮ দশমিক ৪৪ টাকা দিতে হবে। এখানে দাম বাড়বে ২১১ শতাংশ।
এ ছাড়া, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯ দশমিক ৬২ টাকার জায়গায় ১৮ দশমিক ৮৮ টাকা, শিল্প কারখানায় ৭ দশমিক ৭৬ টাকার বদলে ১৮ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকার পরিবর্তে ৪৮ টাকা ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে ১৭ দশমিক শূন্য ৪ টাকার জায়গায় ২৪ দশমিক শূন্য ৫ টাকা প্রতি ইউনিটে ব্যয় করতে হবে।
তিতাসের পরিচালক (অর্থ) শরিফুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানির আর্থিক তারল্যতা, বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা, করদায় সংকুলান, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে বিতরণ মার্জিন ০.৫৫৬২ টাকা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।’
মঙ্গলবার বিইআরসির গণশুনানিতে অংশ নিয়ে কথা বলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। ছবি : এনটিভি
তবে চলতি অর্থ বছরে গ্যাসের দাম বা সঞ্চালন মূল্য কোনো কিছুই বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে সুপারিশ করে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি। আর নানান তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে দাবি করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা।
ক্যাব উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘আপনি যা বিল করছেন তার থেকে কম গ্যাস পাচ্ছে। আপনি যে দাম বাড়াতে চাচ্ছেন, যতটুকু দেওয়ার তা দিয়ে দাম বাড়ানোর কথা বলেন। সেইটা দেবেন না, অথচ দাম বাড়াবেন। এপ্রিলে এলএনজি আনতে পারবেন না। এই এপ্রিলের কথা বলে এ রকম একটা জায়গা থেকে একটা আইনগত কর্তৃত্বের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করার প্রস্তাব পাঠানো যায় না। যে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তা আইনানুগ নয়।’
শামসুল আলম বলেন, ‘অন্যরা তো কেউই প্রস্তাব করেনি বিইআরসিতে। সুতরাং এগুলার কোনোটাই বাড়বে না, এটা বাতিল। নতুন করে সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে হবে।’
আর মাঝেমধ্যে দাম না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আগামী কয়েক বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কেমন হতে পারে তার আগাম চিত্র দেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সামনে একটা পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হোক। আমরা আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করব নাকি ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়াব সেটা যাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের সেই চিন্তা করার অধিকার আছে।’
মঙ্গলবারের শুনানির দ্বিতীয় অধিবেশনে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডও একই ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করে।
১৪ মার্চ গণশুনানি শেষ হওয়ার পর আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিইআরসির প্রতি।