গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ: রিটের আদেশ ৩১ মার্চ
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের ওপর আগামী ৩১ মার্চ আদেশ দিবেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার এ বিষয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
এর আগে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করা হয়।
রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর জন্য একটি প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধেই রিটটি দায়ের করা হয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। আদালত এ বিষয়ে শুনানি শেষে আগামী ৩১ মার্চ আদেশ দিবেন।
গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর আবেদন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার থেকে গণশুনানি করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গতকাল শুনানির সময় বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ, শিল্প ও মোটরযানসহ অন্যান্য গ্রাহক পর্যায়ে ২১১ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে এক চুলা ব্যবহারকারীদের প্রতি মাসে ৭৫০ টাকার পরিবর্তে এক হাজার ৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য মাসপ্রতি ৮০০ টাকার জায়গায় এক হাজার ৪৪০ টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে মিটার থাকা গ্রাহকদের প্রতি ঘনফুট (প্রতি ইউনিট) গ্যাসের মূল্য হিসেবে ৯ দশমিক ১০ টাকার বদলে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
তিতাসের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রকে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩ দশমিক ১৬ টাকার পরিবর্তে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা দিতে হবে। দাম বাড়বে ২০৮ শতাংশ। অন্যদিকে সার কারখানাকে প্রতি ইউনিটে ২ দশমিক ৭১ টাকার বদলে ৮ দশমিক ৪৪ টাকা দিতে হবে। এখানে দাম বাড়বে ২১১ শতাংশ।
এ ছাড়া, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯ দশমিক ৬২ টাকার জায়গায় ১৮ দশমিক ৮৮ টাকা, শিল্প কারখানায় ৭ দশমিক ৭৬ টাকার বদলে ১৮ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকার পরিবর্তে ৪৮ টাকা ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে ১৭ দশমিক শূন্য ৪ টাকার জায়গায় ২৪ দশমিক শূন্য ৫ টাকা প্রতি ইউনিটে ব্যয় করতে হবে।
তিতাসের পরিচালক (অর্থ) শরিফুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানির আর্থিক তারল্যতা, বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা, করদায় সংকুলান, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে বিতরণ মার্জিন ০.৫৫৬২ টাকা বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।’
অন্যদিকে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, আমদানিকৃত ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) গ্রাহকদের সরবরাহের ফলে কোম্পানির যে ক্ষতি হবে তাতে ভারসাম্য আনতে তাঁরা এ প্রস্তাব দিয়েছেন।
তবে আয়-ব্যয়ের নানান তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে এই প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। বিইআরসি আইন মেনে মূল্যায়ন করেনি বলেই এই গণশুনানির আয়োজন করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ক্যাব উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘আপনি যা বিল করছেন তার থেকে কম গ্যাস পাচ্ছে। আপনি যে দাম বাড়াতে চাচ্ছেন, যতটুকু দেওয়ার তা দিয়ে দাম বাড়ানোর কথা বলেন। সেইটা দেবেন না, অথচ দাম বাড়াবেন। এপ্রিলে এলএনজি আনতে পারবেন না। এই এপ্রিলের কথা বলে এ রকম একটা জায়গা থেকে একটা আইনগত কর্তৃত্বের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করার প্রস্তাব পাঠানো যায় না। যে বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তা আইনানুগ নয়।’
শামসুল আলম বলেন, ‘অন্যরা তো কেউই প্রস্তাব করেনি বিইআরসিতে। সুতরাং এগুলার কোনোটাই বাড়বে না, এটা বাতিল। নতুন করে সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে হবে।’
আর মাঝেমধ্যে দাম না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আগামী কয়েক বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কেমন হতে পারে তার আগাম চিত্র দেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সামনে একটা পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হোক। আমরা আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করব নাকি ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়াব সেটা যাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের সেই চিন্তা করার অধিকার আছে।’
মঙ্গলবারের শুনানির দ্বিতীয় অধিবেশনে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডও একই ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করে।
১৪ মার্চ গণশুনানি শেষ হওয়ার পর আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিইআরসির প্রতি।