‘খালেদা জিয়ার শরীর দুর্বল, খাওয়ায় অরুচি, ঘুম কম’
‘খালেদা জিয়ার হাতে ও পায়ের জয়েন্টে পেইন। ডায়াবেটিস স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি; সকালে ১৪ ছিল। উনার শরীর দুর্বল, খাওয়ায় অরুচি ও ঘুম কম হচ্ছে। উনার কেবিনে পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গা আছে; উনি সাপোর্ট নিয়ে হাঁটেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে এভাবেই বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক। আজ সোমবার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
আজ দুপুর পৌনে ১টার দিকে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়। দুপুর সোয়া ২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক।
তবে কারাবন্দি ও চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের বাইরে বা অন্য কোনো হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে মাহবুবুল হক ।
ডা. এ কে মাহবুবুল হক বলেন, ‘আজ দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) ৬২১ নম্বর কেবিনে আছেন। উনি ভালো আছেন। আমরা তাঁর জন্য পাঁচ সদস্যের একটি নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। আমিসহ মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। বোর্ড সদস্যরা তাঁর সমস্যা জানতে চেয়েছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন। তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন।’
নবগঠিত মেডিকেল বোর্ডে আছেন, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জিলন মিঞা সরকার, রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিমা পারভীন, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ এবং অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ। ওই বোর্ডের নেতৃত্ব দেবেন অধ্যাপক ডা. জিলন মিঞা সরকার।
নতুন মেডিকেল বোর্ডে সহকারী হিসেবে আরো দুজন থাকছেন। তাঁরা হলেন- রিউমাটোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও ডা. মামুন (খালেদার জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও নিকটাত্মীয়।)
বিএনপির চেয়ারপারসনকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘বিএসএমএমইউ বাংলাদেশে একটি সুপার স্পেশালাইজড হসপিটাল। এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত এবং এখানে অনেক ভালো ভালো চিকিৎসক আছেন। আমার মনে হয় না তাকে এখান থেকে বাংলাদেশের অন্য কোনো হাসপাতালে নেওয়ার দরকার আছে। এ ছাড়া তিনি (খালেদা জিয়া) এই বোর্ডকে সমর্থন করেছেন।’
বিএনপিনেতাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ডা. মামুনকে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য করা। কিন্তু এবারও তাকে মেডিকেল বোর্ডে রাখা হয়নি। আগের বোর্ড থাকতে নতুন করে কেন মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল হক বলেন, ‘আগের বোর্ডের সভাপতি আবদুল জলিল অবসরে যাওয়ায় নতুন বোর্ড করা হয়েছে। নতুন বোর্ডের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো আপত্তি জানাননি। তিনি এ বোর্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তার জন্য কেবিনের ভেতরে নারী কারারক্ষী, নারী পুলিশ এবং বিএসএমএমইউর গেটে কারা ও থানা পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা আছে।’
দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থান করছেন। এর পর থেকে তিনবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া এই হাসপাতালে যান। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি রয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বেসরকারি বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে নিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মাধ্যমের চিকিৎসা দেওয়ার।