‘বাবা চুরি করে, মা বোবা, কেউ খোঁজ নেয় না’
‘আমার মা বোবা। কথা কইত পারে না। আমার বাবা চুরি করে। মিরপুর এলাকায় থাকে। কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। দিনের বেলা টাকা খুঁজি। আর রাতে গুলিস্তানের নাট্যমঞ্চে ঘুমাই। সবাই সুন্দর সুন্দর জামা পরে, কেউ আমাগো জামা কিনে দেয় না। মামা আপনি আমারে কিছু টাহা দেন না। দুপুরে ভাত খামু।’
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকায় এনটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলে পথশিশু মো. ইয়াছিন (৮)। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরেক পথশিশুর দেখা মিলে। দুজনই ভালো বন্ধু। নাম সুমি (১০)।
এ সময় রমনা বটমূলে ঘুরতে আসা লোকদের দেখে দৌঁড়ে গিয়ে বলতে থাকে ‘ভাইয়া, আপা কিছু টাকা দেন না, দুপুরে ভাত খামু। আপা দেন না ছোট ভাইটারে নিয়ে ভাত খামু।’
এরপর তাকে কিছু টাকা দেওয়ার পর পথশিশু ইয়াছিন এনটিভি অনলাইনকে বলে, ‘আমার একটা ছোট ভাই আছে। নাম ইসমাইল। বয়স পাঁচ বছর অইব। দুই ভাই মিইল্যা রাতে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে ঘুমাই থাহি। আমার মা বোবা। কথা কইত পারে না। আমাগো দুই ভাইকে রাইখা কেরানীগঞ্জে থাকে। আর বাবা চুরি করে মিরপুর এলাকায়। মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে কামাই করে। আমাগো কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। চুরির টাকা দিয়া চোরের সর্দারকে ভালো জিনিসপত্র খাওয়ায়। আর আমাগো কোনো কিচ্ছু খাওয়ায় না, খোঁজও নেয় না।’
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকায় পথশিশু মো. ইয়াছিন ও সুমি। ছবি : এনটিভি
পথশিশু ইয়াছিন জানায়, ‘ভাইয়া, আমারও ইচ্ছা করে সবাইর মতো নতুন জামা পরে ঘুরে বেড়াইতে। সবাই কত মজা করে। নতুন জামা গায়ে দিয়া বাবা-মার সাথে ঘুরছে। আমাগো কেউ আদর করে না। এদিন নাকি সবাই ইলিশ পোলাও খায়। আমারও খাইতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কেউ আমাগো খাওয়ায় না। পরার প্যান্ট দেখিয়ে বলে, ‘কালকা গুলিস্তানে খুইজ্যা নিছি।’
এরপর কথা হয় পথশিশু সুমির সঙ্গে। সে জানায়, ‘আমার বাবা আমাগো তিন ভাইবোনরে রাইখা চইলা গেছে। আমরা মায়ের সাথে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে থাহি। মাঝেমধ্যে আমার মা আমাগো ছাইড়া কোথায় কোথায় চইলা যায়। আবার আহে (আসে)। আমার মাকে ছাড়া একলা থাকতে পারি না। অনেক কষ্ট অয়। দিনের বেলা টাকা খুঁজি, রাতে গুলিস্তানে ঘুমাই। আমার ইচ্ছা করে লাল জামা পইরা ঘুমাইতে।’
আজ রাজধানীর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ সারাদেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে। ইলিশ মাছ, হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে ভুরিভোজ চলছে বিভিন্ন উদযাপনস্থল ও বাসাবাড়িতে। কিন্তু শুধু সাদা ভাত ও ডাল খাওয়ার জন্য রাস্তায় আকুতি জানিয়ে টাকা খুঁজছে এসব পথশিশু। কেউ টাকা দিচ্ছে, কেউবা ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবে অনেক সময় ধরে ইয়াছিন ও সুমিকে টাকা চাইতে দেখা যায়।