ঢাকায় বেড়াতে এসে গ্রেপ্তার, ২৫ মাস পর জামিন
মোহাম্মদ হাসানুর (৩০) রংপুর শহরে একটি সিগারেট কারখানার শ্রমিক ছিলেন। ২০১৭ সালের ২ মার্চ ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ঢাকায় নেমেই হয়ে যান নাশকতার মামলার আসামি। এরপর সন্দেহভাজন হিসেবে তিনটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
প্রায় ২৫ মাস ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আটক ছিলেন হাসানুর। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালত থেকে তাঁর জামিন হয়েছে।
২০১৭ সালের ১ মার্চ সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের সময় রাজধানীর গাবতলী এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় পরিবহন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা গাবতলীর প্রধান সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর করে। আগুনে পুড়িয়ে দেয় পুলিশ বক্স ও পুলিশের একটি রেকারসহ অন্তত চারটি গাড়ি। রক্ষা পায়নি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়। গোটা এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। দুর্বিষহ ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এ ঘটনায় রাজধানী দারুস সালাম থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর ১(৩)১৭। সেই মামলাতে অজ্ঞাত আসামি করা হয় অনেককে। পরের দিন হাসানুর রংপুর থেকে ঢাকায় বেড়াতে এলে সন্দেহভাজন ভাঙচুরকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর আরো দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি ২৫ মাস কারাগারে আটক ছিলেন।
পরিবারের কাছে কারাগারে থাকার বিষয়টি হাসানুর জানালেও পরিবারের আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় তাকে জামিনে মুক্ত করতে পারছিল না। অতপর হাসানুর আজ আদালত থেকে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিনা পয়সায় আইনজীবী নিয়োগের আবেদন করেন।
এর পরই লিগ্যাল এইড থেকে তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মো. আলমগীর হোসাইন।
আজ ঢাকার মহানগর হাকিম মাইনুল ইসলাম আসামি হাসানুরকে তিনটি মামলায় জামিন দেন। এর পরই তিনি মুক্ত হন।
এ বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার আলমগীর হোসাইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসামি হাসানুর বিনা বিচারে ২৫ মাস কারাগারে আটক ছিল। এজাহারে কোনো নাম ছিল না। সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ছিল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে তার অন্য সব আসামি জামিনে আছে।’
আলমগীর বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার পর দ্রুত আইনজীবী নিয়োগ করি। পরে আজ ঢাকার মহানগর হাকিম মাইনুল ইসলামের আদালত থেকে জামিন হয়।’
আলমগীর আরো বলেন, ‘লিগ্যাল এইড মূলত অস্বচ্ছল ও দরিদ্রদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা জেলা ও মহানগরীর মধ্যে কেউ যদি এমন বিনা বিচারে আটক থাকে তাহলে ঢাকা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে বিনা পয়সায় আইনজীবী নিয়োগ দেবে।’
আসামি হাসানুরের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সরকার বলেন, ‘লিগ্যাল এইড থেকে আসামি হাসানুরের বিষয়ে ওকালতনামা পাওয়ার পর আমি তার জামিনের আবেদন করি। আজ আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন।’