অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান
শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি যেকোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর তাগিদ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমার এটাই আহ্বান থাকবে এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যেন সকলেই দূরে থাকে, এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে কেউ যেন জড়িত না হয়। সেটাই আমার কাম্য।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ বুধবার রাতে জাতীয় সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন ১-এর উত্তর প্রদানের আগে তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ড, বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহত ও নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলাসহ কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় শিশু জায়ান চৌধুরী নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে নিহত জায়ানের আহত বাবার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যারা ছোট্ট শিশু নিষ্পাপ তারা কেন এভাবে জীবন দেবে?
শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক এর কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ডের একটি মসজিদে সরাসরি গুলি করে নারী, পুরুষ শিশুসহ অনেকগুলো মানুষকে হত্যা করা হলো।
নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সে সময় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট টিম সেখানে ছিল, খুব অল্পের জন্য তাঁরা বেঁচে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কখনও মানুষের কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
সম্প্রতি সোনাগাজীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা নুসরাত জাহান রাফির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নুসরাতের সাথী যারা তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারল। যে একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। এই ধরনের ঘটনাগুলো সমগ্র মানবজাতির জন্যই অকল্যাণকর।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর কোথাও আর ঘটুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদি তাদের কোনো ধর্ম নাই, দেশ-কাল-পাত্র নাই, জঙ্গি জঙ্গিই, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং কখনো জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। তিনি বলেন, ‘এরা আমাদের পবিত্র ধর্মটাকেই সমগ্র মানবজাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, কেবল ইসলাম নয়, সব ধর্মেই শান্তির বাণী প্রচার করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক ধর্মীয় উন্মাদনায় মানুষের প্রতি যে আঘাত আনে, জীবন কেড়ে নেয়, এটা মানব জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর।
প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার ঘটনায় শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নাতি জায়ান চৌধুরীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘একটা ছোট বাচ্চা, মাত্র আট বছর বয়স, আজকে সে আমাদের মাঝে নেই। তার বাবাও মৃত্যুশয্যায়, বাবাকে এখনো জানতে দেওয়া হয়নি যে, জায়ান নেই। সে বারবার খুঁজছে। আর তার মা বা পরিবার কেমন সময় অতিবাহিত করছে তা আপনারা বুঝতেই পারছেন।’
আজ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়।
গত রোববার শ্রীলঙ্কার রাজধানীসহ একাধিক গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলা হয়। ওই সব ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৫৯। ওই বোমা হামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি শিশু জায়ান চৌধুরীও মারা গেছে। হামলায় জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সও (শেখ সেলিমের মেয়ের জামাই) গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি এখন শ্রীলঙ্কার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শিশু জায়ানের লাশ আজ দুপুরে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে আসে। জায়ানকে শেষবারের মতো দেখতে শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী জায়ানের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং শোকার্ত হয়ে পড়েন। বাদ আসর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে জানাজা শেষে জায়ানকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।