‘কিয়ের শ্রমিক দিবস, ম্যালা খরচ, ম্যালা ট্যাকা দরকার’
‘কিয়ের আবার শ্রমিক দিবস, ম্যালা ট্যাকা দরকার। দুই বোনের স্কুলে ম্যালা খরচ। মার রোগ। অনেকদিন ধরে মা মেসে রানতে (রাঁধতে) পারে না। এহন (এখন) সব আমাকে চালাতে হয়। তাই আজ বস (লেগুনার মালিক) ছুটি দিলেও কাজে আইছি। গরমে খুব কষ্ট হয়। দুই বোনের মাথা অনেক ভালা। তাই চিন্তা করছি তাগোর পড়া শ্যাষ (শেষ) করায়ে চাকরি করামু।’
রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে কথা হয় শফিকের সাথে। পুরো নাম শফিকুল ইসলাম। মোহাম্মদপুরের দিকে যেসব লেগুনা যায় তারই একটিতে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে শফিক। বয়স ১০ বছরের মতো। মহান মে দিবস নিয়ে ভাবার বা ছুটিতে থাকার মতো সময় নেই তার।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএনপি বস্তিতে মা-বোনকে নিয়ে থাকে শফিক। লেগুনার চালকের সহকারী হয়ে ছোট দুই বোনের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের দায়িত্বপালন করছে।
শফিক জানায়, ‘আগে মা-ও ট্যাকা কামাইত। অহন আর পারে না। আমিও আগে স্কুলে যাইতাম। অহন বাদ দিছি। শুধু চিন্তা দুই বোন আর মাকে খাওয়ানো। আল্লাহ ভরসা। কষ্ট করলে আল্লাহ সুখ দিবেন।’
শুধু শফিক নয়, ফার্মগেটের লেগুনা স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ লেগুনার চালক ও হেলপার শিশু। মে দিবসের ছুটি নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই। নেই আক্ষেপও। অনেকেই জানে না শ্রমিক দিবস কী। বরং তাদের অনেকে জানান, একদিন ছুটি কাটালে আয় কমে যাবে, অযথা অনেক টাকা খরচ। তার চেয়ে লেগুনা চালিয়ে আয় করাই ভালো।
এদের ভেতরে ইউসুফ আলী (১১) ফার্মগেট থেকে (৬০ ফিট রাস্তায়) মিরপুর দুই নম্বরের যাত্রীবাহী লেগুনার চালক। রায়ের বাজার বস্তিতে থাকে। শ্রমিক দিবসেও কেন কাজে এসেছে- এমন প্রশ্নে সে বলে, ‘শ্রমিক দিবস কিসের? পাঁচ মাস গাড়ি চালাই। রোজ ভোরে ঘুম থেইকা উঠে আসি আর রাইতে বাড়ি ফিরি। মা নেই, আব্বা রিকশা চালায়। আব্বা নেশা করে সব নষ্ট করে। আমার এক ছোটবোন আর এক ছোট ভাই আছে। প্রতিদিন বাজার করতে অয়।’
আর একজন লেগুনাচালক শাকিল হোসেন (২৬)। তিনি মাধ্যমিক পাস করে অভাবের তাড়নায় ঢাকায় চলে আসেন। তারপর থেকে বাস আর লেগুনা চালিয়ে সময় কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘বাসায় বসে থাকলে লস। ইনকাম করতে পারব না। ঢাকায় অনেক বন্ধু আছে। বাইরে গেলে খরচ। খরচ যাতে না হয় সেজন্য কাজ করছি।’