মদন গোপাল সুইটস বলে রক্ষা!
রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সবজি ও মৎস্য হিমাগারে ১৫ দিন আগের বানানো মিষ্টি রেখেছিল উত্তরার নামি প্রতিষ্ঠান আলী বাবা সুইটস।
গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেই হিমাগারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় হিমাগার থেকে ২০০ মণ আমদানি করা পচা মাংস, ১১০ মণ মিষ্টিসহ মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন পণ্য জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় রেন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংকে ১৫ লাখ টাকা, আলী বাবা সুইটসকে ১০ লাখ টাকা ও ইউনিভার্সেল ট্রেডিং হাউজকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আর নিয়ম লঙ্ঘন করে হিমাগারটিতে মাংস ও মিষ্টি রাখায় বিএডিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করার কথা জানিয়েছিলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জে। গত ২৮ এপ্রিল জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। হিমাগারের ২৪টি প্লাস্টিকের ড্রামে মেয়াদোত্তীর্ণ ২৪ মণ মিষ্টির সন্ধান পায় তারা। ৬০টি কার্টনে ১৫ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুরও পাওয়া যায়।
২৪ মণ মিষ্টি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত সবচেয়ে নামি ও সুপরিচিত মিষ্টির দোকান হিসেবে খ্যাত মদন গোপাল সুইটস কেবিনের বলে নিশ্চিত হন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আগামী ৬ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সম্ভাব্য দিনে মিষ্টির ব্যাপক চাহিদাকে মাথায় রেখে অধিক মুনাফার আশায় এই বিপুল পরিমাণ মিষ্টি মজুত করা হয় বলে অভিযান পরিচালনাকারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন জানান। এ ছাড়া আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য ভৈরব উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী ৬০টি কার্টনে ১৫ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর মজুত রাখেন বলে তিনি জানান।
বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে মানববন্ধন করা হয়। ছবি : এনটিভি
জব্দ করা মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি ড্রাম থেকে মাটিতে ফেলে বালু দিয়ে নষ্ট করা হয়। এ ছাড়া ১৫ মণ খেজুর আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়। এ ঘটনায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫১ ধারায় মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল সংরক্ষণের দায়ে এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আদায় করেন সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন। কিন্তু মিষ্টি ও খেজুরের মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। এতে জেলার নাগরিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে একটি সংগঠন গতকাল মঙ্গলবার জেলা শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সাবেক সিভিল সার্জন অধ্যক্ষ ডা. মো. আতিকুল সারোয়ার বলেন, হিমাগারে কোনো মতেই তৈরি খাবার রাখা যাবে না, এটি স্বাস্থ্য বিধি বহির্ভূত। কারণ এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির গুরুতর আশঙ্কা থাকে। হিমাগারে খাদ্যে অন্যান্য স্থানের তুলনায় জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি শতগুণ বেশি। তাই জনস্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই।
এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মো. ফেরদৌস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি ও খেজুরের মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য ছিল। কিন্তু তা না করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কিশোরগঞ্জের সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইনে মামলা দায়েরসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জব্দ করা মিষ্টি ও খেজুর মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট ছিল এবং শস্যের হিমাগারে এগুলোর সংরক্ষণও যথাযথ ছিল না।
তবে মিষ্টি ও খেজুর নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এবং মালিকদের পরিচয় জানার পরও তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো না- এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ইব্রাহিম হোসেন বলেন, অবৈধভাবে সংরক্ষণের অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে কোল্ড স্টোরেজকে জরিমানা করে বিষয়টি ফয়সালা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিষ্টি ও খেজুর মালিকদের দোকানে অভিযান চালিয়ে এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।