নুসরাত হত্যাকাণ্ড : ফেনীর এসপি প্রত্যাহার
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আজ রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য জানান।
সোহেল রানা বলেন, নুসরাত জাহান হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এসপি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে সারা দেশে আলোচিত নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অভিযুক্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহাম্মদকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম অভিযুক্ত ওসিকে রক্ষায় ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য পাঠান পুলিশ সদর দপ্তরে।
গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী (নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা) তাঁর বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে—এমন সংবাদ দিলে ওই ভবনের ছাদে যান নুসরাত। সেখানে বোরকা ও নেকাব পরা চার-পাঁচজন তাঁকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত।
পরের দিন ১১ এপ্রিল বিকেলে জানাজা শেষে নুসরাতকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পুড়িয়ে হত্যার আগে নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিও ধারণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে ১৫ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, যৌন হয়রানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলার পর ২৭ মার্চ নুসরাতকে থানায় ডাকেন ওসি মোয়াজ্জেম। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি ঘটনা নিয়ে নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করেন, যা পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
এদিকে নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ১০ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। এ ছাড়া নুসরাত হত্যা মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শেষে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত দল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অন্তত চারজনের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। ডিআইজি এস এম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের ওই তদন্ত দল ৩০ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও এসআই ইকবাল নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের কাজে একে অন্যকে সহযোগিতা করেন। পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার সকাল ১০টায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে যাননি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে রওনা দেন। পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন।