হত্যাচেষ্টার আসামি ও মাদকসেবীরা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে!
ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। রয়েছেন মাদকসেবী, ঠিকাদারী ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, অগ্নিসন্ত্রাসে যুক্ত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় ও অছাত্ররাও।
দুই বছর মেয়াদি কমিটির ৯ মাস পার হওয়ার পর সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এই কমিটির অনুমোদন দেন।
এর আগে দুপুরের দিকে তালিকা নিয়ে গণভবনে যান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা। তাঁরা ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্যদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন।
গত বছরের ১১ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের পর কমিটি ঘোষণার নিয়ম থাকলেও শীর্ষ পদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে সময় নেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতার নাম প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির ২ নম্বর সহসভাপতি তানজিল ভূঁইয়া তানভীর, সহসভাপতি সুরঞ্জন ঘোষ ও সোহেল রানার বয়স ৩০ বছরের বেশি। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের সদস্য পদই থাকার কথা নয়।
মাদারীপুরের বাসিন্দা তানভীর ঠিকাদারী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি সব সময় প্রাডো গাড়ি ব্যবহার করেন।
৫ নম্বর সহসভাপতি আরেফিন সিদ্দিকী সুজনকে এক সময় ইয়াবা সেবন ও মাদক রাখার অভিযোগে মাস্টারদা সূর্যসেন হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
৬ নম্বর সহসভাপতি আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ও ইয়াবা সেবন এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মল চত্বরে পয়লা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
৭ নম্বর সহসভাপতির পদ পেয়েছেন বরকত হোসেন হাওলাদার। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
২০ নম্বর সহসভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান হিমেল প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারী ব্যবসায়ী। তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) পড়াশোনা শেষ করে ঠিকাদারী ব্যবসায় যুক্ত হন।
আরেক সহসভাপতি মাহমুদুল হাসানের পরিবার জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল গোপালগঞ্জে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি।
আরেক সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান তুষারের বিরুদ্ধে পয়লা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আছে।
ছাত্রলীগের ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া প্রদীপ চৌধুরী ২০১৪-১৫ সেশনে পরীক্ষায় নকলের দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগ।
দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব সাবেক চাকরিজীবী এবং তাঁর বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আছে।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. রাকিনুল হক চৌধুরী কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের আপন ছোট ভাই। তিনি ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয় বলে জানা গেছে।
এই কমিটির বিষয়ে কথা বলতে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ফোন দিলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। পরে আর কথা বলেননি।
সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে তিনবার ফোন দিলেও তিনি কথা বলেননি।