সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল, মা-ছেলেমেয়েকে ভৈরবে দাফন
ঢাকার উত্তরখান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে নিহত মা জাহানারা বেগম মুক্তা (৪৮), ছেলে কাজী মুহিব হাসান রসি (২৮) ও প্রতিবন্ধী মেয়ে আফিয়া সুলতানা মীমের (২০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার জগন্নাথপুরে সোমবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় কাদির সরকার বাড়ির ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাদের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৮টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ তিনটি জগন্নাথপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় প্রতিবেশী ও এলাকাবাসী একনজর দেখতে লাশের পাশে ছুটে আসে।
রোববার রাতে উত্তরখানের মৈনারটেক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে জাহানারা বেগম মুক্তা, ছেলে কাজী মুহিব হাসান রসি ও প্রতিবন্ধী মেয়ে আফিয়া সুলতানা মীমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ধারণা করছে, কমপক্ষে তিন-চার দিন আগে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে এবং ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেছেন।
জাহানারা বেগমের স্বামীর নাম মৃত ইকবাল হোসেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ভৈরবের জগন্নাথপুর এলাকায়। গ্রামের বাড়িতে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছিল পরিবারটির মাঝে। বাড়িতে তাদের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই ছিল না। তবে ঠিক কী কারণে তারা নিহত বা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, এমন কোনো ধারণা দিতে পারেনি আত্মীয় বা প্রতিবেশীরা।
জাহানারা বেগমের জা (দেবরের স্ত্রী) তানজিনা আক্তার জানান, তাঁর ভাসুর ইকবাল হোসেন বিআরডিবি অফিসের শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে চাকরিরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওইসময় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর জাহানারা ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। তাঁর ছেলে মুহিব সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
প্রতিবেশী শফিক ও মুরাদ জানান, পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ইকবালের ভাইদের সঙ্গে জাহানারার বিরোধ থাকায় বাড়িতে তাদের থাকার ঘর ছিল না। তাই তাঁরা বাড়িতে খুব একটা আসতেনও না। তবে গত দুই মাস আগে বাড়ির পাশের এক বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেন জাহানারা বেগম মুক্তা। সেখানে থেকে আত্মীয়দের সঙ্গে দেন-দরবারে সিদ্ধান্ত হয়, সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা করতে রমজানের ঈদের পর সালিশ দরবার হবে।
প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসা ও উত্তরখানে তাদের মালিকাধীন একটি খালি জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করতে গত ৪ মে তারা ভৈরবের বাসা ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে যান।