বাথরুমে পাওয়া শিশুটি সচ্ছল পরিবারের!
ঢাকা শিশু হাসপাতালের ৩০১ নম্বর কেবিনে যেন আকাশ থেকে এক ফালি চাঁদ নেমে এসেছে। এমন চাঁদের টুকরোকে দেখার জন্য এখন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছে শিশু হাসপাতালে, অনেকেই আবার চাইছেন শিশুটির দায়িত্ব নিতে। অথচ তখনো শিশুটি উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে ফেলে যাওয়া মেয়ে শিশুটির ব্যাপারে এখনো কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। শিশুটি কি চুরি যাওয়া কোনো বাচ্চা, নাকি ফেলে যাওয়া হয়েছে- কোনো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরে কে বা কারা ফুটফুটে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে যায়।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, শিশুটির নিরাপত্তার জন্য তার কেবিনের পাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টা আগে এর চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ ছিল, যখন মেয়ে শিশুটিকে হাসপাতালের বাথরুম থেকে প্রথম উদ্ধার করা হয়। তখন মায়াভরা এই মুখটি দেখে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যায় শিশুটি নেওয়ার জন্য। ওই অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন একজন চিকিৎসক। নানা দিক বিবেচনা করে ওই চিকিৎসকের কাছে মনে হয়েছে হয়তো বা শিশুটি কোনো সচ্ছল পরিবারের সন্তান।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছে শিশুটি একটু ভালো ফ্যামিলির। কারণ তার কালার, জন্মের পর যে ওয়েট (ওজন), বিল্ডআপ। এগুলো অনেক স্ট্যান্ডার্ড।’
ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরিদ আহমেদ বলছিলেন, ‘বাচ্চাটি সুন্দর করে দুধ খাচ্ছে, প্রস্রাব-পায়খানা করছে। বমি করছে না বা কোনো ধরনের ইনফেকশনের প্রমাণ মেলেনি। বাচ্চাটা খুবই ভালো আছে।’
তবে যে বিষয়টি শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে রহস্য মনে হচ্ছে তা হলো তার বয়স। অবৈধ সন্তান মনে করে সাধারণত জন্মের পর পরই শিশুদের ফেলা যাওয়ার রেকর্ড বেশি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে মেয়ে শিশুটির বয়স কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত দিন।
শিশু হাসপাতালের অপর সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আবু তায়েব বলেন, ‘এমনও হতে পারে, মা জানে না। অন্যজন এনে ফেলে দিয়েছে— এমনটাও তো হতে পারে। দুইটাই হতে পারে।’
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ কে বা কারা শিশুটিকে হাসপাতালে ফেলে গেল, এ ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাচ্ছে না শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশ। তবে প্রাথমিকভাবে কিছু সন্দেহ করা যাচ্ছে, সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে।
ডা. মো. আবু তায়েব বলেন, ‘আমরা গতকাল যেটা দেখছি, দুইটা মহিলা একসঙ্গে আসছিল। একজন বোরকা পরা, তারা দুজন খুব তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকল, পরে স্বাভাবিকভাবে আরামসে বের হয়ে আসল। হাতে যেটা দেখার মতো ছিল, সেটা পরে বের হওয়ার সময় আর ছিল না।’
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনেকে আবেদন করেছে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য। উদ্ধারের পর হাসপাতালের যে কর্মী শিশুটিকে যত্ন দিচ্ছেন তিনিও চাইছেন শিশুটির মা হতে। অনেকেই আবার হাসপাতালের বারান্দায় ছোটাছুটি করছেন শিশুটিকে পাওয়ার জন্য।
শিশুটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহী এক ব্যক্তি এনটিভিকে বলছিলেন, ‘একটা মানুষ দুনিয়ায় এসে বাথরুমে পড়ে থাকবে এমন জঘন্য কাজ আর নেই। আর সেই মানুষের দায়িত্ব নিতে পারার মতো ভালো কিছু দুনিয়াতে আছে বলে আমার মনে হয় না।’
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, একমাত্র আদালতই নির্ধারণ করবে এই শিশুটি অভিভাবক শেষপর্যন্ত কে হতে পারেন। সত্যিকারের মা-বাবা এসেও যদি দাবি করেন, তবে তাদেরও প্রমাণ দিতে হবে আদালতে।