‘মেয়ে ফুটবলারদের স্কুলে’ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে কী
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় মেয়েদের ফুটবলের জন্য দেশখ্যাত কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রহস্যের জট খোলেনি এখনো।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত কারণ বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে তদন্তের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন মিয়া বাদী হয়ে ধোবাউড়া থানায় একটি মামলা করেছেন।
গত মঙ্গলবার ভোরে ওই স্কুলের দ্বিতীয় তলায় শিক্ষকদের কমনরুমে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আর এতে পুড়ে যায় ফুটবল খেলে স্কুলের মেয়েদের অর্জন করা মেডেল ও সনদ। এই স্কুলটি জাতীয় পর্যায়ে মেয়েদের ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেয়েছে। এই স্কুলের বেশ কয়েকজন ফুটবলার মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলেরও সদস্য।
কলসিন্দুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফুটবল কন্যাদের সৌজন্যে স্কুলটি সরকারীকরণের কথা বলেছেন। এটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যেই কে বা কারা এই জঘন্য কাজ করেছে। সেটা আমরা কল্পনা করতে পারতেছি না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য আবেদন করছি।’
অপরদিকে হালুয়াঘাট সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর বলেন, এখানকার মানুষ ফুটবল খেলাকে পছন্দ করে না, এটা আমরা শুনিনি। কারণ, এই এলাকার মানুষ মেয়ে ফুটবলারদের নিয়ে গর্বিত। এই এলাকার মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে এই মেয়েগুলোর কারণেই। কারণ, ধোবাউড়া উপজেলাকে বাংলাদেশের মানুষ চেনে না, কলসিন্দুরকে চেনে। সুতরাং এ জন্য তারা গর্বিত। এই স্কুলটি কলেজসহ সরকারি হতে যাচ্ছে শুধু এই মেয়েদের কারণে। সুতরাং ফুটবল খেলাকে এলাকার লোকজন পছন্দ করে না, সেটা আমাদের নোটিশে নাই। গতকাল যখন আমরা সেখানে গিয়েছিলাম, তখনো দেখেছি মেয়েরা মাঠে ফুটবল খেলছে।’
‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে তাদের (শিক্ষক বা স্কুল কর্তৃপক্ষ) ভেতরকার কোনো বিষয়কে নিয়ে এটা হতে পারে,’ যোগ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
স্কুলটির নিচতলার ফটকের তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেট টপকে দ্বিতীয় তলার কক্ষের তালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা কীভাবে অগ্নিসংযোগ করেছে, তা বুঝতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র পাল বলেন, ‘সকালে বিশেষ ক্লাস নেওয়ার জন্য স্কুলে যাই। তখন একজন এসে বলতেছিলেন আগুনের কথা। পরে আমি গিয়ে টেবিল উল্টে দিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভাই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, গত এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ফরম ফিলআপ সমস্যার কারণে প্রবেশপত্র না পাওয়ায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এ জন্য স্কুলের কারিগরি শাখার একজন টেকনিশিয়ানকে বরখাস্ত করা হয়। এর পরই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।