ভৈরবে অগ্নিদুর্যোগ প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবীদের ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ
‘প্রতিরোধ করি অগ্নিদুর্যোগ, লাঘব করি মানব দুর্ভোগ’-এ প্রতিপাদ্যে অগ্নিদুর্যোগ প্রতিরোধে পৌরসভা ও ইউনিয়নভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী তৈরিতে ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়েছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন ওই কর্মশালার আয়োজন করেছে। টানা চলবে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে।
সোমবার দুপুরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর নিচে মেঘনা নদীর তীরে উদ্বোধনী কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান রাশেদ ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইউএনও ইসরাত সাদমীন বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ লোক ছোট-বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়। চার থেকে পাঁচ লাখ লোক বড় ধরনের অগ্নিদগ্ধতার শিকার হয়, যাদের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। অগ্নিদগ্ধ অন্তত ছয় হাজার লোক প্রতিবছর মারা যায়। আর এর মধ্যে দুই হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে। সাড়ে তিন হাজার লোক বিভিন্ন ধরনের অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর এসবের পেছনে রয়েছে জনসচেতনতার অভাব। এটা দূর করা গেলে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর মানুষের মধ্যে এ সচেতনা ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইউএনও আরো বলেন, এই কর্মশালার মাধ্যমে পৌরসভাসহ প্রত্যেকটা ইউনিয়নে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হবে, যেন তারা তাদের এলাকায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান বলেন, উন্নত বিশ্বে ফায়ার সায়েন্স অ্যান্ড পাবলিক সেফটি ইনস্টিটিউটের কর্মীরা শুধু অগ্নিনির্বাপনেই অংশ নেন না, তারা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে শহরে-গ্রামে কাজ করে থাকেন। বাংলাদেশেও এই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে এর মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান রাশেদ বলেন, বিশ্বের বড় বড় দেশে বিশ্বমানের কৌশল প্রয়োগ করে অগ্নিদুর্ঘটনা কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এখনি সময় এই অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে ব্যবস্থা নেওয়া ও জনসচেতনতা বাড়ানো।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মুসা ভূঁইয়া বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। আগের চেয়ে এখন অগ্নিকাণ্ডের ধরনও পাল্টেছে। তাই উন্নত বিশ্বে দেখা গেছে তারা অগ্নিকাণ্ডের ধরনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করে থাকে। আমরাও উন্নত বিশ্বকেই অনুসরণ করব। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অগ্নিকাণ্ডের ধরনগুলো মোকাবিলা করার জন্য নতুন করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হবে।
পরে উন্মুক্ত কর্মশালায় অগ্নিদুর্যোগে অগ্নিনির্বাপণে কী কী করণীয়, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা তা মহড়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের দেখান। প্রশিক্ষণ শেষে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ২২ জন তালিকাভুক্ত হন। তালিকাভুক্তদের পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সনদ দেওয়া হবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।