বনানীর এফআর টাওয়ারে অনিয়ম, দায়ীদের নাম জানালেন মন্ত্রী
বনানীর এফআর টাওয়ারের শেষ পাঁচতলা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। আর এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জমির মালিক, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণসহ অন্তত ৪০ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
আজ বুধবার সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের এসব তথ্য তুলে ধরেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া, রাজধানীর এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের মধ্যে এক হাজার ৫২৫টি নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কয়েকদফা সময় বাড়িয়ে আজ বুধবার সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী। তিনি জানান, ২৩ তলা এফআর টাওয়ারের ১৫ তলা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে সঠিকভাবে। এরপর ১৮ তলা পর্যন্ত নির্মাণে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। এরপর ২৩ তলা পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে, রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। যার দায় রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান , জমির মালিক, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ এড়াতে পারে না।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘যে অংশটা অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে সে অংশটাকে অপসারণ করা, ভেঙে ফেলার জন্য যে আইনগত প্রক্রিয়া, সে প্রক্রিয়ায় আমরা কাজ শুরু করেছি। রাজউকের হয়তো কোনো অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগের মধ্য দিয়ে বিল্ডিংয়ের মালিক, ডেভেলপাররা বাইরে একটি প্ল্যান তৈরি করতে পারে। আইনগতভাবে ওই প্ল্যানের কোনো বৈধতা নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘হয়তো অসাধু যোগসাজশে একটা লোন পারমিশন সেখান থেকে নেওয়া হয়, সেই পারমিশনের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিলেন তাদেরও আমরা দায়ী করেছি।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটি এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য রাজউকের তখনকার চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেমসহ মোট ৩১ জনকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণের সাথে জড়িত রূপায়ণের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। আর রাজউকের তদন্ত কমিটি মোট ৩৯ জনকে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ৩৮ জন রাজউকের তখনকার চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী। অপরজন লিজ গ্রহীতা। শেষ পর্যন্ত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে কি না— সেই প্রশ্ন ছিল মন্ত্রীর কাছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘রাজউকের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে গ্রাসরুট পর্যন্ত যারা সম্পৃক্ত তাদের নাম উল্লেখ করে রিপোর্টে দিয়েছি। আপনারা আশ্বস্ত থাকতে পারেন, আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যারাই অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ভাবেই কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ এ ক্ষেত্রে নেই। ফ্রম টুমরো উই আর গোয়িং টু টেক অ্যাকশন।’
এ ছাড়া এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বহুতল ভবন পরিদর্শন করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি জানান, এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের মধ্যে ৪৭৮টি ভবনের নকশা দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। যার বেশিরভাগই অনুমোদিত নকশা ছাড়া নির্মিত হয়েছে বলে ধারণা মন্ত্রণালয়ের। আর অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে উপরে, সামনে, পেছনে ও পাশে নির্মাণ কাজ করা হয়েছে এমন ভবন এক হাজার ৪৭টি। যথাযথ অগ্নি নির্বাপণ ও প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই এমন ভবন সংখ্যা অন্তত সাড়ে এক হাজার ১০০টি। আর আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক ও অ-আবাসিক ব্যবহার এবং পার্কিংয়ের জায়গা অন্যকাজে ব্যবহার করছে এমন ভবনের সংখ্যা ৪৮২টি।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘যারা প্ল্যান দেখাতে পারেননি তাদের একটা লিমিটেড টাইম দিয়ে দেব। যদি এই টাইমের ভেতর প্ল্যান দেখাতে না পারে, তাহলে আমরা ধরে নেব তাদের প্ল্যান নেই। যাদের ব্যত্যয় পেয়েছি সেগুলো ভেঙে ফেলার জন্য আমরা নির্দেশ দেব। ভেঙে না ফেললে আইনগতভাবে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সে ব্যবস্থা নেব।’
বহুতল ছাড়া অন্যান্য ভবনও পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।