টাকা দেন, টাকা নেন
‘টাকা দেন, টাকা নেন’ এভাবে ক্রেতাদের কাছে টানছেন রাজধানীর গুলিস্তানের ‘নতুন টাকার হাটের’ ব্যবসায়ীরা। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বেশ জমজমাট নতুন টাকার হাট। ঈদে সালামি দিতে সবাই এ বাজার থেকে একটু বেশি দামে কেনেন নতুন টাকা। ব্যবসায়ীরাও কচকচে নতুন টাকার বান্ডিলের পসরা বসান। লেনদেনও বেশ ভালো, তাই খুশি ব্যবসায়ীরাও।
ঈদের দিনে আমাদের দেশে সালামি হিসেবে নতুন টাকা দেওয়ার রেওয়াজ অনেক আগে থেকে। ছোটরা এমনকি বড়রাও তাদের গুরুজনদের কাছ থেকে সালামি হিসেবে যখন নতুন টাকা হাতে পায়, তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। নতুন টাকার ঘ্রাণ নিতে পছন্দ করে অনেকে। নতুন টাকার কচকচে শব্দ শুনতেও ভালো লাগে। নতুন টাকা পকেটে রাখায় যেন অন্য রকম আনন্দ।
শনিবার ছুটির দিনে গুলিস্তানের টাকার হাটে ভিড় দেখা যায় প্রচুর। কথা হয় গুলিস্তানের টাকার হাটের সবচেয়ে পুরোনো ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন তিনি।
এনটিভি অনলাইনকে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে গুলিস্তানে এ ব্যবসা করি। এইটা দিয়াই সংসার চালাই। এটাই আমার পেশা। আমার বাবারও পেশা ছিল এটা। আমি গুলিস্তানের এ লাইনের প্রথম ব্যবসায়ী। ঈদ উপলক্ষে এখন ব্যবসা ভালোই বাড়ছে। আমার আগে এখানে আর কেউ ব্যবসা করত না।’
আজাদ বলেন, ‘বাবার হাত ধরে আমি এই পেশায় আসি। প্রথমে ১৯৭২ সালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে তৎকালীন স্টেট ব্যাংকের কার্যালয় ছিল। আমার বাবা এই ব্যাংক থেকে নতুন টাকা এনে পার্কের পাশের ফুটপাতে বিক্রি করতেন। তাঁর সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন। আমি তখন টাঙ্গাইলের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকায় চলে আসি। বাবার সঙ্গে টাকা কেনাবেচার কাজ করি।’
নিজের সংগ্রামী জীবনের বর্ণনা দিয়ে আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হওয়ার পর মতিঝিল এলাকায় জায়গা না পেয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করি গুলিস্তানে। এরমধ্যে মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স করে ফেলি। আমার হাত ধরে এই পেশায় যোগ দেন আরো কয়েকজন। সারা বছর ফুটপাতে ছোট টেবিলের ওপর টাকা বিছিয়ে চলে এ ব্যবসা। বছরের দুই ঈদে টাকা কেনাবেচা বেশি হয়। অনেকে সালামি দেওয়ার জন্য নতুন টাকা কেনেন। এ ছাড়া বিয়ে উপলক্ষেও টাকা কিনতে আসে অনেকে। প্রথম দিকে দুইটা দোকান ছিল গুলিস্তানে।’
আজাদের মতো রিপন, স্বপন, শফিউলও ব্যবসা করেন গুলিস্তানের টাকার হাটে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছেঁড়া টাকা নিয়ে অনেকেই বেকায়দায় পড়ে। যারা এই ছেঁড়া টাকা চালাতে পারে না, তাদের কাছ থেকে টাকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে নোটগুলো কিনে নেন। এ ছাড়া নতুন নোটের বান্ডেলও তারা বিক্রি করেন। এ ক্ষেত্রে ১০০ টাকার নতুন একটি বান্ডেল নিতে অতিরিক্ত ১০০ টাকা দিতে হয়। ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে অতিরিক্ত আরো ৮০-১০০ টাকা, ৫০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে ১০০ টাকা দিতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন ২০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। কখনো কখনো আবার মোটেও হয় না। তবে কোনো ক্রেতা এলে তাকে কেউই ফিরে যেতে দেন না। খুব কম লাভ হলেও টাকার নোট বিক্রি করে দেন তারা।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাতে হকার বসার বিষয়ে কড়াকড়ির কারণে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েছে এই টাকা ব্যবসায়ীদের। একটু সুযোগ নিয়ে বসার চেষ্টা করলেই পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা তাড়া করেন। তখন টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাতে হয় তাদের। মাঝেমধ্যে দেখা দেয় ছিনতাইকারীচক্র। তারা হঠাৎ করেই টাকার বান্ডেল নিয়ে দৌড় দেয়।