রুমালে চলে রফিকুলের সংসার
রফিকুল ইসলাম। বয়স ৬০ পার হয়ে ৭০ ছুঁইছুঁই। মিরপুর এলাকায় মুদি দোকান করে সংসার চালাতেন। সাত বছর আগে হঠাৎ আগুন লেগে দোকানসহ সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেইসঙ্গে পুড়ে যায় তাঁর স্বপ্নও। চার সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ে যান রফিকুল। উপায়ন্তর না পেয়ে গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতে হেঁটে হেঁটে রুমাল, মাস্ক ও টুপি বিক্রি শুরু করেন। এখন রুমাল বিক্রি করেই চলে রফিকুলের ছয় সদস্যের পরিবার।
রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গরমের দিনে রুমাল বিক্রি একটু বেশি হয়। ঘাম মোছার জন্য যাত্রীরা আমার কাছ থেকে রুমাল কিনে নেন। এ রুমালেই কোনোরকমে কেটে যায় আমার সংসার।’
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একটি লাঠির সঙ্গে রুমাল, মাস্ক ও টুপি সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রফিকুল ইসলাম। ক্রেতাদের ডাকছেন, ‘রুমাল নেন, মাস্ক নেন, নিজেকে রক্ষা করেন।’ এভাবে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন রফিকুল।
ক্রেতাদের কেউ কেউ গরমে ঘাম মুছতে রুমাল কিনছেন, কেউ বা ধুলাবালি থেকে মুক্তি পেতে নিচ্ছেন মাস্ক। বিভিন্ন দামের রুমাল ও মাস্ক বিক্রি করেন রফিকুল। ১০ টাকা, ১৫ টাকা, ২০ টাকাসহ বিভিন্ন দামের রুমাল রয়েছে তাঁর কাছে। আরো রয়েছে পরিবেশবান্ধব মাস্ক। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকা দরের মাস্কও রয়েছে তাঁর কাছে।
তবে এখানেও বাধা পুলিশ। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সারা দিন বিক্রি করেন এসব পণ্য। নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় না বসলেও উৎকোচ দিয়ে এলাকায় ব্যবসা করতে হয়। জিজ্ঞাসা করতেই রফিকুল বলেন, ‘লাইনের লোক আছে, তারা এসে দৈনিক ৫০ টাকা করে নিয়ে যান।’
রফিকুল জানান, সাধারণত দৈনিক দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার বিক্রি করেন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে কিছুটা বেশি বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত তাঁর কাছে থাকে বলেও জানান তিনি।
রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দোকান পুড়ে যাওয়ায় চার সন্তান নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। তাৎক্ষণিক উপায়ন্তর না দেখে ফুটপাতে রুমাল, মাস্ক ব্যবসা শুরু করি। এখন এ ব্যবসা হয়ে গেছে আমার সংসার চালানোর হাতিয়ার।’
রফিকুলের মতো গুলিস্তান এলাকায় অর্ধশতাধিক লোককে দেখা যায়, যাঁরা রফিকুলের মতোই ‘রুমাল নেন, মাস্ক নেন, ধুলাবালি থেকে বাঁচেন’ এমন কথায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে রুমাল ও মাস্ক বিক্রি করছেন।