এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফেনীর তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. হান্নান খান।
অভিযুক্ত তিনজন হলেন, বেসরকারি এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক এবং ফেনী সদরের মজলিশপুরের তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তজু (৬৭), বরইয়া এলাকার মো. আবু ইউসুফ(৭১) ও উত্তর গোবিন্দপুর এলাকার নুর মোহাম্মদ ওরফে নুর আহমদ (৭৩)। তিনজনের মধ্যে তোফাজ্জল ও ইউসুফ পলাতক। নুর মোহাম্মদকে বর্তমান ঠিকানা নীলফামারী থেকে ২০ মে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তোফাজ্জল ১৯৭১ সালের আগে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছাত্রসংঘের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি শিল্পপতি ও এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন।
আবু ইউসুফ ও নুর মোহাম্মদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কর্মী হিসেবে ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ।
২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে তদন্ত শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ফেনী সদর থানার ফকির হাট বাজার এলাকায় আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ করেন তাঁরা।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগ
এক. ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল রাজাকার তোফাজ্জলসহ সাত-আটজন সশস্ত্র রাজাকার ফেনী সদরের ফকির হাট বাজারে আবুল হোসেনের দোকানে আক্রমণ করে। তোফাজ্জল তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে উত্তর ধলিয়ার গোলাম রাব্বানীকে গুলি করে আহত করেন এবং আবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেন। আসামিরা ফকিরহাট বাজারে ১০-১৫টি দোকান লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে। তারপর তোফাজ্জল আবুল হোসেনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার দোকানের জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করেন।
দুই. ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট রাত ১০টার দিকে রাজাকার আবু ইউসুফসহ পাঁচ-ছয়জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আব্দুর রউপ মেম্বারের বাড়িঘর লুটপাট করে। রাজাকার তোফাজ্জল, ইউসুফ, নুর মোহাম্মদসহ অন্য রাজাকাররা উত্তর গোবিন্দপুরের নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালী ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক শামছুল হক, আব্দুল হক, মুজিবুল হক (বর্তমানে মৃত) ও আব্দুর রউফকে (বর্তমানে মৃত) নিজ নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন করে।
একই দিন রাত ১টার দিকে তোফাজ্জল, আবু ইউসুফ, নুর মোহাম্মদসহ চার-পাঁচজন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আব্দুল ওহাবকে আটক করে। পরে রাজাকার তোফাজ্জলের নির্দেশে রাজাকার ইউসুফ তাকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ছাড়া আটককৃতদের কালিদহ বড়দাহ প্রসন্ন রায় জমিদার বাড়ি রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আটক রেখে তাদের অমানুষিক নির্যাতন করে।