সহপাঠীর লাশ বস্তাবন্দি করে ঘুমিয়ে ছিল তিন কিশোর
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ফারদিন আলম রূপককে (১৬) গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শুক্রবার দুপুরে একটি ভবনের ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয় রূপকের লাশ। ঘটনার জের ধরে রূপকের তিন সহপাঠীকে আটক করেছে পুলিশ।
ওই তিন সহপাঠী জানায় মুক্তিপণের উদ্দেশে রূপককে ডেকে আনে তারা। পরে হত্যা করে। হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে ছাদে রেখে দেয়। পরে তিনজন এক বাসায় ঘুমিয়ে রাতটি পার করে!
আটক তিনজন হলো, ফজলে রাব্বি পিয়াল(১৭), আরাফাত পাটোয়ারী (১৬) ও রেজাউল কবির খাঁ (১৬)।
স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার ভিআইপি প্লাজা সংলগ্ন আইডিয়েল স্কুলের পেছনে আবু বক্কর মিয়ার ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের মালিক আবু বক্কর মিয়া। তিনি রূপকের সহপাঠী রাব্বির দাদা।
নিহত রূপক ভৈরব বাজারের টিনপট্টি এলাকার আল্টাটেক সিমেন্টের ডিলার ব্যবসায়ী নূরে আলম বিপ্লবের বড় ছেলে। রূপক চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় স্থানীয় কেবি পাইলট সরকারি স্কুল থেকে পাস করে। রূপক নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার গৌরীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নূরে আলম তাঁর পরিবার নিয়ে বর্তমানে ভৈরব বাজারের টিনপট্টি এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন।
ভৈরবের একটি ভবনের ছাদে পাওয়া যায় রূপকের লাশ। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রূপক গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাবির নামাজ পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরে রাতভর খোঁজাখুজি করে রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা নূরে আলম। সকালে স্থানীয় র্যাব ক্যাম্পকেও অবগত করেন বিষয়টি।
এদিকে রূপককে ছাদে হত্যার পর লাশ বস্তবন্দি করে ওই তিন সহপাঠি রাতে এক সঙ্গে ঘুমায় রাব্বিদের বাসায়। রাতে ছাদে আসা যাওয়া এবং দিনের বেলা তাদের আচরণে ভিন্নতা দেখতে পান রাব্বির পরিবারের লোকজন। এ সময় তিনজনকে একসঙ্গে জেরা করলে তারা রূপককে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে ছাদে রেখে দেওয়ার কথা জানায়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশসহ রূপকের পরিবারকে জানান তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বস্তা থেকে গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। পরে সেটি রূপকের বলে সনাক্ত করেন তার পরিবারের লোকজন।
আটককৃতরা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আরাফাত পাটোয়ারী তার বন্ধু রূপককে মোবাইলে জরুরি কথা আছে বলে রাব্বিদের ভবনে আসতে বলে। এর আগে তারা তিন বন্ধু শলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় রূপককে ডেকে এনে আটক করে তার বাবার কাছে মুক্তিপণের টাকা চাইবে। এদিকে রূপক বন্ধুর ফোন পেয়ে দ্রুত ওই ভবনে চলে আসে।
আসার পর তিন বন্ধু মিলে তাকে ঝাঁপটে ধরলে রূপক বাঁচার জন্য চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তার গলায় ছুরি চালালে সে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এরপর রাতেই তিনজন মিলে বস্তায় তার লাশ ভর্তি করে ছাদে রেখে দেয়।
ভৈরব থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার জানান, প্রাথমিক সুরৎতহাল রিপোর্ট এবং জড়িতদের স্বীকারোক্তিতে নিশ্চিত বলা যায় নিহত রূপককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। আসামি তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা তিনজন প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।