থানা চত্বরে সাংবাদিকদের অবস্থান, ‘আমাদের গ্রেপ্তার করুন’
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলার পাঁচ দিনের মাথায় পাল্টা একটি সাজানো মামলায় ২১ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। প্রতিবাদে চার ঘণ্টা সদর থানার সামনে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। স্বেচ্ছায় কারাবরণের দাবি জানিয়ে ওই অবস্থান নেন তাঁরা।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ওই অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। আজ সোমবার ওই ঘটনা ঘটে। ২১ জন সাংবাদিক সরাসরি থানায় গিয়ে চত্বরে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘আমাদের গ্রেপ্তার করুন।’
টানা চার ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় পুলিশ সুপার ইলতুতমিস সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভূয়া মামলাটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসক্লাব সেক্রেটারির দেওয়া প্রথম মামলাটি তার নিজস্ব গতিতে চলবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে। এরপরই সাংবাদিকরা তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদ ও জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু সাংবাদিকদের প্রতি সহানভূতি ও সংহতি প্রকাশ করেন।
গত ৩০ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। তারা সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সাংবাদিকদের এলাপাতাড়িভাবে মারধর করে। এ সময় আহত হন প্রেসক্লাব সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ , মোহনা টিভির আব্দুল জলিল, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, সেক্রেটারি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সেক্রটারি আবদুল বারীসহ ১০ সাংবাদিক। এ ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা করা হয়।
এদিকে এই মামলার আসামিদের না ধরে পুলিশ স্থানীয় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির চাপের মুখে ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় আজ সোমবার আহত সাংবাদিক ও এই প্রতিনিধিসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে একটি ভুয়া মামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা ফুঁসে ওঠেন। ২১ জন সাংবাদিক সরাসরি থানায় গিয়ে চত্বরে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘আমাদের গ্রেপ্তার করুন।’ পুলিশ এ সময় বিপাকে পড়ে যায়। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন ছাড়াও খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি , সাতক্ষীরার ডিসি ও এসপির সাথে কথা বলেন। এর পর প্রশাসনে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। নানাভাবে পুলিশ সাংবাদিকদের নিবৃত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় মনিরুজ্জামান তুহিনের দেওয়া মামলাটিকে (নম্বর ৫) ‘সাজানো ভুয়া ও ভ্যালুলেস অকার্যকর’ আখ্যায়িত করে পুলিশ সপুার ইলতুতমিস তা প্রত্যাহার বলে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দেওয়া মামলাটি ( মামলা নম্বর ৬৯) তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বিষয়টির শান্তিপূর্ন সমাধান করবেন বলেও জানান। এসব নিশ্চয়তা পেয়ে চার ঘন্টা পর সাংবাদিকরা তাদের কর্মসূচি তুলে নেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ গ্রহনকারী সাংবাদিকরা হলেন প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সেক্রেটারি মমতাজ আহমেদ বাপী, মোহনা টিভির আবদুল জলিল, মানবজমিনের ই্য়ারব হোসেন, ডিবিসি টিভির জিল্লুর রহমান, যুগান্তরের সুভাষ চৌধুরী, এটিএনএর এম কামরুজ্জামান, বাংলা ভিশন টিভির আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রেসক্লাব নির্বাহী কমিটির সদস্য সেলিম রেজা মুকুল, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, দৈনিক দক্ষিনের মশাল সম্পাদক আশেক ই এলাহি, সমাজের কথার আমিরুজ্জামান বাবু, দৈনিক বনিক বার্তার গোলাম সরোয়ার, বাংলা ট্রিবিউনের আসাদুজ্জামান মধু, সাবেক সেক্রেটারি আবদুল বারী, যুগ্মসম্পাদক আবদুস সামাদ, দৈনিক কালের চিত্রর মো. হাসানউল্লাহ, কালের চিত্রর আশরাফুল ইসলাম খোকন, দৈনিক দক্ষিনাঞ্চলের আব্দুল গফুর ও মো. হাসান ইমাম।
এ সময় দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলাম, ধেনিক সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, সাবেক সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুসসহ আরও দুই ডজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।