১৫ জনকে পিটিয়ে বের করে দিলেন ছাত্রদলের বিদ্রোহীরা
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকে ১৫ জনকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছেন ছাত্রদলের বিদ্রোহীরা। তাঁরা সবাই দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সমর্থক। তাঁরা রিজভীকেও সসম্মানে কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। নয়তো লাঞ্ছিত করে বের করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
এর আগে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে দেখা যায়। বেলা সোয়া ১১টার দিকে কার্যালয়ের মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে ১১টা ২০ মিনিটে কার্যালয়ের সামনে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন।
বিএনপির এই চার নেতা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁদের বাধা দেন সাবেক ছাত্রনেতারা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে কমিটির বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়।
ছাত্রনেতারা বিএনপির চার নেতাকে বলেন, বয়সসীমা বেঁধে না দিয়ে ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি দিতে হবে। আর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাই দুটি পদ নিয়ে অফিসকেই বাড়িঘর বানিয়েছেন। রিজভীকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান।
এ সময় শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন। তবে ছাত্রনেতারা বলেন, ‘ভেতরে নয়, এখানেই কথা বলুন।’
পরে বরকত উল্লাহ বুলু কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যান। আর মিলন, এ্যানী ও মোশাররফ কার্যালয়ের পাশে বইয়ের দোকানে বসতে চাইলে দোকানের শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর এ্যানী ছাত্রনেতাদের ধমক দিলে এক নেতা তাঁকে ধাক্কা দেন।
ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক শেষে ফজলুল হক মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দল থেকে দেওয়া হয়েছে। আর আমরা সবাই বসে এটা কার্যকর করব। তবে দুঃখ ও অভিমান থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। আমরা তাদের দুঃখ ও বেদনা শুনব। সেটা আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বলব।’
বিক্ষোভের একপর্যায়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর আবার বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পর ছাত্রদলের বিদ্রোহীরা কার্যালয়ের মূল দরজার তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু সময় পর ভেতর থেকে ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পূর্বের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়নের অনুসারীদের বের করে আনতে দেখা যায়। এ সময় বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের কিল ঘুষি লাথি মারেন। সর্বশেষ নয়নকে বের করা আনা হয়। গেটের সামনে বিক্ষুব্ধরা নয়নকেও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। পরে ছাত্রদলেরই কয়েকজন তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাতে তুলে দেন।
বিক্ষুব্ধরা জানান, নয়ন তাঁর দলবল নিয়ে সকাল থেকে কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে পাহাড়া দিচ্ছিলেন। তাই তাঁকে বের করে দেওয়া হলো।
ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কার্যালয়কে নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে রাখা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হঠাৎ করে কমিটি বিলুপ্ত করেন। তিনি দলীয় কার্যালয়কে নিজ বাসভবন বানিয়ে রেখেছেন। আমরা বলেছি, উনি যেন সম্মানের সঙ্গে এখান থেকে বের হয়ে যান।
কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলছে। রিজভী যদি সম্মানের সঙ্গে বের না হন, তাহলে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় নামানো হবে- এমন হুমকি দিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেকরা।
এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রদলের কমিটির নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে রিজভীকে রেখেই তালা লাগিয়ে দেন।
বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি মামুন বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের যেসব দাবি আছে সেগুলো আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর একটি দাবিনামা দিয়েছিলাম। তা বাস্তবায়ন না করে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হঠাৎ কমিটি বাতিল করেছেন। তিনি ছাত্রদলের কমিটিতে থাকার জন্য ৩৫ বছর বয়স নির্ধারণ করেছেন, এটা বাতিল করতে হবে।
মামুন বিল্লাহ বলেন, রিজভী ভাই যদি না নামেন তাহলে আমরা তালা ভেঙে উপরে উঠব। আর যদি রিজভী ভাই নিচে নেমে যান এবং তাঁকে যদি আইসিইউতে ভর্তি করতে হয় সেই খরচ আমি দেব। আমি সামনে অ্যাম্বুলেন্স এনে রাখলাম। তবু নোংরা রাজনীতি করতে দেব না।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা চলছে। বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা বাইরে থাকা নেতাদের।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ৩ জুন রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করার কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ছাত্রদলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। কেবল ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে যেকোনো বছরে এসএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
তবে সংগঠনটির সাবেক নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্ধারণ না করে স্বল্প মেয়াদে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি কমিটি গঠন এবং পরের কমিটিকেও এক বছরের স্বল্প মেয়াদে গঠন করে ছাত্রদলের নেতৃত্বের জট কমানোর দাবি করেছেন। কিন্তু বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের সেই দাবি অগ্রাহ্য করে নানান শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পছন্দের নেতাকে সামনে আনার জন্য তারা এ ধরনের শর্ত দিয়েছেন।