কটিয়াদীতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত রাজনের জানাজা সম্পন্ন, আটক দুই
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় প্রতিপক্ষের হাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া তাবলিগ জামাতের কর্মী আবদুর রহিম রাজনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কটিয়াদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কাকরাইল মসজিদের তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা আবদুল্লাহ জানাজায় ইমামতি করেন।
এদিকে রাজনের মৃত্যুর ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগে স্থানীয় জালালপুর জামে মসজিদের ইমাম ও কটিয়াদি তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা কাওছার মিয়া এবং বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শামা মো. ইকবাল হায়াৎ। এ নিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হলো।
জানাজার আগে নিহত রাজনের শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন মো. আলী আকবর। নিহত রাজনের তিন বছরের শিশু ছেলেকে কোলে নিয়ে রাজনের মামা মামুনুর রশীদ কাঁদতে কাঁদতে বক্তব্য দেন। তখন উপস্থিত সবার চোখ ভিজে যায়।
জানাজা শেষে কটিয়াদী সদরের কলামহল এলাকায় দরগা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে রাজনের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে দীর্ঘ ২২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল সোমবার দুপুরে তাবলিগ জামাতের কর্মী আবদুর রহিম রাজন (২৭) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মারা যান। পরে এশার নামাজের পর ঢাকার কাকরাইল মসজিদে রাজনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাতেই লাশ কটিয়াদীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আবদুর রহিম রাজন কটিয়াদী সদরের পূর্বপাড়া মহল্লার মোস্তফা মিয়ার ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং এক শিশু ছেলের জনক ছিলেন।
রাজনের জানাজার আগে তাঁর শিশু ছেলেকে কোলে নিয়ে মামার আহাজারি। ছবি : এনটিভি
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজন ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা তাবলিগ জামাত মার্কাজের একজন সক্রিয় কর্মী। গত ১৯ মে রাতে কটিয়াদী উপজেলা সদরের কলামহল জামে মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে কটিয়াদী সদরে মধ্যপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে ফিরেন। পরে মসজিদে অবস্থানরত তাবলিগ জামাতের প্রয়োজনে রাত পৌনে ১১টার দিকে পুনরায় বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হন। বাসা থেকে বের হয়ে কিছুদূর এগুতেই পাঁচ যুবক রাজনকে ধরে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। এ সময় তিনি চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকেন এবং একপর্যায়ে পাশের একটি ড্রেনে ঝাপিয়ে পড়েন। আর্ত চিৎকার শুনে তাঁর পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে সে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসকরা রাজনের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার কথা বলে সংকটাপন্ন অবস্থার কথা জানান।
অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার সময় স্বজনদের কাছে রাজন তাঁর শরীরে আগুন লাগানোর বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
তাঁর সূত্র ধরে একদিন পর ২১ মে রাজনের মামা মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে কটিয়াদি থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ মাহমুদুল হাসান ও সোহেল মিয়া নামের এজাহারভুক্ত দুজনকে আটক করে। বর্তমানে ওই দুজন কিশোরগঞ্জ কারাগারে আছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজনের সঙ্গে অবস্থান করা তাবলিগ কর্মী এস এম সোহেল রানা জানান, রাজন ছিল ভারতের মাওলানা সাদপন্থী তাবলিগ কর্মী। তাই প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে পকিস্তানের সমর্থক মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা তাঁকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।