বিষ খেলেও মনে হয় মানুষের এই কষ্ট হয় না : সোহেল তাজ
এগারো দিন পরে বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ তাঁর নিখোঁজ ভাগ্নেকে ফিরে পাওয়ার পর বলছেন, এমনটা যেন আর কোনো পরিবারের সঙ্গে না হয়।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভকে ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর তাঁকে পুলিশি পাহারায় ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকায় সাংবাদিকদের সামনে তাজ বলেন, ‘আমাদের নিজেদের সঙ্গে এমনটা হয়েছে। কেউ নিখোঁজ হলে তাঁর পরিবারের ওপর দিয়ে কী অবস্থা যায়, আমরা জানি। এই মানসিক যন্ত্রণা কোনো মানুষের জন্য কাম্য হতে পারে না।’
এত দিন ধরে একটা অনিশ্চয়তার ওপর ভর করে অপেক্ষা করতে হয়েছে সৌরভের পুরো পরিবারকে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে এক ফেসবুক লাইভেও তিনি এ কথা জানান।
সেখানে তিনি বলেন, ‘এই কয়দিন তো আমাদের অনুভূতি বলতে কিছুই ছিল না। খাওয়া-দাওয়া নেই। কোনো ঘুম নেই। কখন কল আসবে, ওর গলা শোনা যাবে কি-না। এই ভেবে দিনরাত অপেক্ষা করে গেছি। এটা একটা বিষাক্ত অনুভূতি। বিষ খেলেও মনে হয় মানুষের এই কষ্ট হয় না।’
এ সময় সৌরভের মা বলেন, অন্য কোনো বাবা-মাকে যেন এই 'বিভীষিকাময়' অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।
পুলিশের দাবি, অপহরণকারীরা সৌরভকে তারাকান্দা উপজেলার বটতলা বাজার এলাকার একটি রাইস মিলের কাছে গাড়ি থেকে ফেলে রেখে যায়। এ সময় ফ্যাক্টরির কয়েকজন কর্মচারী সৌরভকে দেখতে পেয়ে তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করে বিষয়টি জানান।
এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সৌরভকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে।
উদ্ধারের সময় সৌরভ শারীরিকভাবে অক্ষত থাকলেও মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন।
সেখান তিনি সৌরভকে তাঁর নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া ও গোসলের ব্যবস্থা করেন। এরপর পুলিশি নিরাপত্তায় ঢাকার পথে রওনা দেন তিনি।
এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সামনে সোহেল তাজ বলেন, ‘সৌরভের অবস্থা ভালো ছিল না। আমি যতটুকু জেনেছি যে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।’
‘ওর গায়ে কোনো জামা ছিল না, খালি পায়জামা পরা ছিল। সে খুব ক্ষুধার্ত ছিল। তবে আমরা ওকে অক্ষত অবস্থায় পাচ্ছি এটাই বেশি।’
তবে সৌরভকে এত দিন কারা, কোথায়, কী অবস্থায় রেখেছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘আপনারা বুঝতে পারছেন সে যেখানেই ছিল, নিশ্চয়ই শান্তিতে ছিল না। ও আমাকে আভাস-ইঙ্গিত করেছে যে ওর কী দুরবস্থা ছিল।’
‘মানে আপনারা বুঝতে পারছেন ওর মানসিক অবস্থাটা, একেবারে বিধ্বস্ত। এখন ওর ওপরে কোনো চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। তো আমরা এই বিষয়ে আলাপ করব না।’
গত ৯ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভ অপহৃত হন।
ওই দিন রাতে তাঁর বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরে শনিবার সোহেল তাজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তাঁর ভাগ্নেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
সৌরভের পরিবার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
কয়েক দিন আগে সৌরভের বাবা-মাকে নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন সোহেল তাজ এক লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, এর আগে ১৬ মে আরো একবার চোখ বেঁধে ঢাকার বনানীর এক বন্ধুর বাসা থেকে সৌরভকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
২৪ ঘণ্টা পর একটি ফরমে সই নিয়ে ফেরতও দিয়ে যাওয়া হয়। কারা এর পেছনে জড়িত, সেটি তারা জানেন বলেও দাবি করছেন তিনি।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নতুন নয়।
তবে দেশটির সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী, যাঁর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের, সে রকম কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিরল।