আমার ছেলেদের কেউ খারাপ বলতে পারবেন না
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের খেলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাই যে খুব ভালো খেলবে, তা নয়। এতগুলো দেশ খেলল, তার মধ্যে মাত্র চারটি দেশ সেমিফাইনাল খেলবে। তাহলে কি বাকি সবাই খুব খারাপ খেলেছে? এখানে কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নাই। দোষ দিতে হলে চারটি বাদ দিয়ে সবকটাকেই দোষ দিতে হবে।
এ সময় প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের নিজেরা ছোট করি কেন? নিজেদের খারাপ বলব কেন? আরো অনেক বড় বড় দেশও তো খারাপ খেলেছে। আমি আমার ছেলেদেরকে কখনো নিরুৎসাহিত করি না। ৩৮৪ রানের জবাবে ৩৩৩ করল বাংলাদেশ। এটাকে খারাপ বলবেন কীভাবে। আমার ছেলেদের কেউ খারাপ বলতে পারবেন না।
আজ সোমবার বিকেলে সরকারি বাসভবন গণভবনে সদ্যসমাপ্ত চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন সফররত অবস্থায়ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ খেলায় যথেষ্ট উন্নতি করেছে। সাহসী মনোভাব নিয়ে যেভাবে মোকাবিলা করেছে, আমি এর প্রশংসা করি। বিশ্বকাপ পাওয়া বড় বড় দলের সঙ্গে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ।
সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ব ক্রিকেটে স্থান করে নিয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার ব্যাপারে আগ্রহী করে গড়ে তোলার প্রতি জোর দিয়ে প্রধামন্ত্রী বলেন, মাঝখানে আট নয় বছর পিছিয়ে গেলেও আমরা কিন্তু এখন সারা দেশে ছোট পর্যায় থেকে ছেলেমেয়েদের খেলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। খেলার ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেলের এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আজকের সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের সহযোগিতা, গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে বাম জোটের হরতাল ও দেশে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাসহ নানা জরুরি বিষয় নিয়ে কথা বলেন প্রধামন্ত্রী।
চীন সফরের ফলাফল নিয়ে আজ সোমবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে চীন সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
পাঁচ দিনের সফরে গত ১ জুলাই চীনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংসহ দেশটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। রোহিঙ্গারা যাতে শিগগিরই তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য এ সংকটের দ্রুত সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে চীন।
ক্ষমতাসীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) জানিয়েছে, আপসে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য তারা মিয়ানমারের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা-সংক্রান্ত নয়টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য এলওসি (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন-সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক । এ ছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের সঙ্গে দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
চীন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনা এবং চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা তিয়েনআনমেন স্কয়ারে হিরোস মেমোরিয়ালে চীনা বিপ্লবের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।