বন্ধুত্ব-প্রেম-বিয়ে, মূল লক্ষ জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্তিকরণ
প্রথমে টার্গেট করে ফেসবুকে বন্ধুত্ব। বিভিন্ন প্রলোভনে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি। তারপর বিয়ে। পুরো প্রক্রিয়াটার মূল উদ্দেশ্য হলো- জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্তিকরণ। তবে এই সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এর পেছনে একাধিক নারী জড়িত থাকে। মূলত ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করে জঙ্গিবাদে জড়ানোর মিশনে নামে সংঘবদ্ধ চক্রটি।
প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গি সংগঠনে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে এক নারীসহ আনসার আল ইসলামের দুই সক্রিয় সদস্যকে বরিশাল শহরের একটি মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ২-এর সদস্যরা। এঁরা হলেন জান্নাতুল নাঈমা ও মো. আফজাল হোসেন। সাফিয়া আক্তার তানজী নামের এক নারীকে উদ্ধার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
এমরানুল হাসান বলেন, ‘র্যাব ২-এর একটি আভিযানিক দল সোমবার দিবাগত রাতে বরিশাল শহরের একটি মাদ্রাসায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সাফিয়া আক্তার তানজী নামের এক নারীকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আনসার আল ইসলামের সক্রিয় নারী সদস্য জান্নাতুল নাঈমাকে (২২) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বলেন, ‘পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন র্যাব সদস্যরা। এ সময় আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য মো. আফজাল হোসেনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়।’
গ্রেপ্তার হওয়া মো. আফজাল হোসেন সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা এমরানুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার নিকটস্থ একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠকের ভূমিকা পালন করছেন আফজাল। জিজ্ঞাসাবাদে সংগঠনের নির্দেশনা অনুসারে নারী সদস্যদের দলে অন্তর্ভুক্তি ও নারী সদস্যদের দ্বারা নাশকতার পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন আফজাল।’
নাঈমাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘কৌশলগত কারণে জঙ্গিরা নারী সদস্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করত তারা। এরপর বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়াত সেই নারীকে। তানজীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল নিয়ে আসা এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন গ্রেপ্তার করা নাঈমা।’
সাফিয়া আক্তার তানজীর বরাত দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, চট্টগ্রামের একটি কলেজে বিবিএ অধ্যয়নরত ছিলেন তানজী। চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করতেন তিনি। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নাঈমাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেখানেই একটি গ্রুপে তাঁকে যুক্ত করেন নাঈমা। পরে তিনি ও অন্য নারী সদস্যদের মাধ্যমে বরিশাল নিবাসী সহিফুল ওরফে সাইফের সঙ্গে পরিচয় হয় তানজীর। পরে তাঁর সঙ্গে ফেসবুকেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে সাইফের। এ ছাড়া নাঈমা ও অন্য নারীদের প্ররোচনায় সাইফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন তানজী।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল আরো জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পর নাঈমা ও অন্য নারী সদস্যদের প্ররোচনায় সাইফের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে গত ২৬ জুন ঘর ছাড়েন তানজী। এ সময় নাঈমা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
বরিশালে পৌঁছানোর পর কথিত প্রেমিক সাইফ তানজীকে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করান। কিন্তু বিয়ের কথা বললে সময়ক্ষেপণ করতেন তিনি। মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় তানজীকে জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ করা হয় বলে জানান এমরানুল।
র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, নাঈমা ও সাইফের প্ররোচনায় তানজী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নারী সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনাও করেন। বেশ কয়েকজন নারীকে তিনি জঙ্গিবাদে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
নাঈমাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা এমরানুল জানান, তাঁর সহযোগী অন্য সদস্যদের প্ররোচনায় সাইফকে বিয়ে করার জন্য তানজীকে কোরআনের হিফজ করার জন্য শর্ত দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের মধ্যে কথা হয়, বিয়ের করবেন বলে হবু স্ত্রীকে মাদ্রাসায় ভর্তি, তাঁর থাকা-খাওয়া, ভরণ পোষণের দায়িত্ব সাইফ বহন করবেন। সে হিসেবে গত ২৬ জুন তানজীকে বরিশালে নিয়ে আসেন। পরে সাইফ ও নাঈমা কৌশলে তাঁকে আপন বোন পরিচয়ে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করান। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসায় অবস্থানকালীন নাঈমার তত্ত্বাবধানে তানজীকে জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ করা এবং উগ্রবাদী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান।