মাদারীপুরে ওসির বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজি, মারধর ও মিথ্যা মামলার’ অভিযোগ
দায়িত্ব গ্রহণের মাসখানেক না যেতেই মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে এক আবাসিক হোটেল মালিককে মারধর ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার রাতে সদর থানায় ওসি সওগাতুল আলমের কক্ষে শহরের ‘সুমন আবাসিক হোটেলে’র মালিক সিরাজ মুন্সীকে চাঁদাবাজির দাবিতে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জেলার আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী হোটেল মালিক সিরাজ এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত সোমবার রাতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তাঁর মালিকানাধীন সুমন হোটেলের একটি কক্ষ ভাড়া নেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার সালাম পেদা ও তাঁর শ্যালিকা। রাত ৮টার দিকে হোটেলে তল্লাশি চালান মাদারীপুর পুলিশের ডিএসবি শাখার শহিদুল ইসলাম। সে সময় তিনি পেদা ও তাঁর শ্যালিকাকে জেরা করে কথার অমিল খুঁজে পেলে তাঁদের সঙ্গে সিরাজকেও আটক করে সদর থানায় নিয়ে যান।
সিরাজ বলেন, ‘পরের দিন মঙ্গলবার সকালে ওসি সওগাতুল আলম আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে নেন। সে সময় তিনি আমার কাছে মাসিক ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে তিনি আমাকে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন। চড়ের আঘাতে আমার চোখের ভেতর জখম হয় ও রক্ত জমে যায়। পরে তিনি আমার হোটেলের বোর্ডার সালাম পেদাকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি সাজানো মামলাও করান এবং আমাকে আদালতে পাঠান।’
মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হোটেল মালিক সিরাজ মুন্সী। ছবি : এনটিভি
‘গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আদালত আমাকে জামিন দেন। চোখের আঘাত গুরুতর হওয়ায় রাতেই আমি সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি,’ বলেন সিরাজ মুন্সী।
সিরাজের চোখের আঘাতের ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবির হোসেন বলেন, ‘চোখের আঘাত বেশি হওয়ায় রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। এখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আরো ভালো চিকিৎসার জন্য তিনি অন্যত্র কোথাও যেতে পারেন। তাঁর চোখ ও মুখে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
ওসির মারধরের ঘটনার নেপথ্যের ব্যাপারে জানাতে গিয়ে সিরাজ আরো জানান, গত ১৭ জুন সদর থানায় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত সোমবারের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় দুবার ওসি সওগাতুল আলম তাঁকে থানায় ডেকে নেন এবং মাসিক ১৫ হাজার করে টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তখন থেকেই সওগাতুল তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন বলে জানান সিরাজ। তারই জের ধরে গত সোমবার ওসি ওই হামলা চালান বলে তাঁর দাবি। এ ঘটনায় আগামী রোববার তিনি মামলা করবেন বলে জানান।
এদিকে হোটেল মালিক সিরাজকে নির্যাতনের বিষয় অস্বীকার করে ওসি সওগাতুল আলম বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁর (সিরাজ মুন্সী) দেখাই হয়নি, তাঁকে শারীরিক নির্যাতনের প্রশ্নই ওঠে না। আমার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। বরং তাঁর বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি অভিযোগ করায় মামলা আমলে নেওয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে সিরাজের বিরুদ্ধে মামলাকারী সালামের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। থানার একজন অভিযোগ লিখছে, আমি টিপসই দিছি। আমি মামলা করতে রাজি না। আর হোটেলে একজন পুলিশ পরিচয়ে আমাদের কাছে টাকা দাবি করে।’
এ ঘটনার ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি ওসি নির্যাতন করে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’