দক্ষিণ চট্টগ্রামে কমেছে বন্যার পানি, ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, লোহাগাড়া ও আনোয়ারা উপজেলায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। জেগে উঠছে তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়ক। পানি কমে যাওয়ায় চোখে পড়ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় সব উপজেলার অধিকাংশ সড়ক।
তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া উপজেলা। এ উপজেলার অধিকাংশ সড়কই বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এদিকে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রান্না করা খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বানভাসি মানুষ।
এদিকে, কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সব জায়গা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘদিন পর চালু হয়েছে। চন্দনাইশের হাশিমপুর কাঁচরাপাড়া এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গতকাল সোমবার বিকেল থেকেই যান চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আগে গত ১০ জুলাই মাহালিয়া রাস্তার মাথা এলাকার সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছিল। এখনো ওই এলাকায় কোমরপানি থাকায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণে সাতকানিয়ার কেওচিয়া, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, বাজালিয়া, পুরানগড়, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া, আমিলাইশ, এওচিয়া, চরতী, সাতকানিয়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।
পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ, সাতকানিয়া আদালত, সাতকানিয়া থানা, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজ, জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, বাজালিয়া অলি আহমদ বীরবিক্রম ডিগ্রি কলেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়।
ডুবে যায় উপজেলার সবচেয়ে উঁচু এলাকা হিসেবে পরিচিত কেরানীহাটও। একইভাবে চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলাও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়।
তবে গত রোববার বৃষ্টি না হওয়ায় ওই দিন রাত থেকে পানি কমতে শুরু করে। আজ সকালে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সবকটি স্থান থেকে বন্যার পানি আরো কমে যায়।
সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাপস দত্ত জানান, বাজালিয়া ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের জন্য সরকারি পক্ষ থেকে আট টন চাল ও সাড়ে ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়।
ওই ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা খলিল সওদাগরের দ্বিতল বাড়ি বন্যার পানির স্রোতে সম্পূর্ণ ধসে যায়। গতকাল বিকেলে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা ধসে যাওয়া বাড়ি ও বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, সাতকানিয়ার বানভাসি মানুষের জন্য বন্যাকবলিত সবকটি ইউনিয়নে ত্রাণ হিসেবে চাল, শুকনো ও রান্না করা খাবার ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরো সাহায্য চেয়েছি। সব মিলিয়ে ৯৫ টন চাল, সাড়ে চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়। আগামীতে আরো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।’
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বন্যার শুরু থেকে সাতকানিয়ায় বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছি। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার সবকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখো মানুষ। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’