শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি, খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ৪৩ জনের আপিল
১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলির মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আটজনসহ মোট ৪৩ জন রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত একজন এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত তিনজন পলাতক থাকায় তাঁরা আপিল করেননি।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আজ রোববার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ আপিল দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ মামলায় বিচারিক আদালতে যাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়েছে তারা সবাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ স্থানীয় নেতাকর্মী। অথচ স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে রেলওয়ের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজনের কারো সাক্ষ্য এখানে গ্রহণ করা হয়নি। এতে বোঝা যায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলা দায়ের এবং রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আপিলে মোট ১৭টি যুক্তি তুলে ধরে আসামিদের খালাস চেয়েছি। আশা করছি উচ্চ আদালতে আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।’
কায়সার কামাল বলেন, আপিলকারী ৪৩ জনের মধ্যে আটজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, ২২ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এবং ১৩ জন আসামি ১০ বছর করে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। অন্য আসামিরা এখনো আপিল করেননি।
চলতি মাসের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী ওই মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া রায়ে ২৫ জনের যাবজ্জীবন, ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের তিন লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩২ জন আদালতে হাজির ছিলেন। পরে ১৪ জুলাই যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আরো সাতজন আত্মসমর্পণ করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম। এর মধ্যে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু পলাতক রয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের মুহূর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে আবারও ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় পরে দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। মামলা করার পর ওই বছর কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য তা সিআইডিতে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) পাঠান। পরে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।
নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে ৫২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। মামলার ৫২ আসামির মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। গত রোববার ৩০ জন আসামি জামিন আবেদন করলে বিচারক তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।