তাসলিমা হত্যার ‘প্রত্যক্ষদর্শীকে’ রাতভর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ
রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু হত্যার ঘটনায় ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ আকলিমা বেগমকে সোমবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে নজরদারিতে রেখেছে বাড্ডা থানা পুলিশ।
সোমবার রাতে তাঁকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম এবং আকলিমা বেগম এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন।
এদিকে তাসলিমাকে গণপিটুনিতে হত্যার সময় উপস্থিত থাকা ‘আকলিমা’ নামের এক নারীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তাসলিমাকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।
ভাইরাল হওয়া ছবির সঙ্গে উত্তরপূর্ব বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর মা আকলিমা বেগমের ছবির মিল রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আকলিমা বেগম থাকেন উত্তর বাড্ডার আলীর মোড়ের মাছ বাজারের পেছনের একটি ভাড়া বাড়িতে। মঙ্গলবার দুপুরে এনটিভি অনলাইন আকলিমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে আকলিমা বেগমকে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবি দেখায় এনটিভি অনলাইন। তখন আকলিমা বেগম বলেন, ‘এই ছবির গায়ের কালারের সঙ্গে আমার গায়ের কালার মিলে যেতে পারে কিন্তু সব কিছু মিলছে না। মানুষের সঙ্গে কিন্তু মানুষের মিল থাকতেই পারে।’
ভাইরাল হওয়া ছবির সঙ্গে আপনার কোথায় অমিল মনে হচ্ছে- এমন প্রশ্নে আকলিমা বলেন, ‘চোখ, মুখ আর কাপড় ঠিক নেই। ওই ছবির চোখ ভেতরে ঢোকানো এবং আমার মুখের সাথে মিল নেই। তা ছাড়া আমি বোরখা পরে ছিলাম তখন।’
কিন্তু আপনি দেখেছেন কী, এই ছবির সঙ্গে আপনার ছবি, মুখের আবহ এবং চুল মিলে যায়। এই কথার জবাবে ওই ছাত্রীর মা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছবি মিলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা আমি না। ওইখানে যতক্ষণ ছিলাম আমার মাথা থেকে এক ফোটাও কাপড় পড়েনি। তখন আমি প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে ছিলাম।’
আপনি কী ঘটনার সময় নিচে গিয়েছিলেন কখনো- এমন প্রশ্নে আকলিমা বেগম বলেন, ‘পুলিশ আসার কিছুক্ষণ আগে নিচে নেমেছিলাম। সে সময় একটি কার্পাশ তুলা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা। তখন অনেক মানুষ চলে গেছে।’
কিন্তু গতকাল যখন আমার (প্রতিবেদক) সঙ্গে আপনার কথা হয় তখন কিন্তু বলেছিলেন, আপনি নিচে নামেননি। আজ বলছেন নেমেছেন-এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি চলে যাওয়ার সময় বলেছিলাম। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। কিন্তু প্রথম দিকে আমরা নামার সুযোগ পাইনি। তাই শেষে নেমেছিলাম। আমরা যখন নেমেছিলাম তখনো দু-একজন পা দিয়ে ওই আপাকে মারতেছিল।’
তাসলিমা বেগম রেনুকে পিটিয়ে হত্যা করার সময় কোনো শিক্ষক নিচে নেমেছিলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ না, কোনো শিক্ষকই নিচে নামেননি। উপর থেকে আমরা অভিভাবকরা নামলেও কোনো শিক্ষক নামেননি।’
আকলিমা বেগম বলেন, ‘আজ সারা রাত আমি বাড্ডা থানায় ছিলাম। থানার তদন্ত ওসি আমার কাছে এই ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। আমাকে পুলিশ অনেকবার বলেছে, এটা আমি। কিন্তু আমি পুলিশকে বলেছি, এই ছবি আমি না। অন্য কেউ।’
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় আকলিমা বেগমের স্বামী মো. মিরাজ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভাইলাল হওয়া ছবি তাঁকে দেখালে মো. মিরাজ প্রথমে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছবির সঙ্গে মিল তো থাকতেই পারে। আমার দুজন আত্মীয় আছে তাদের আপনার সামনে নিয়ে এলে আপনি বুঝতেই পারবেন না এরা দুজন।’
তবে কিছু সময় পর মো. মিরাজ বলেন, ‘এই ছবির সঙ্গে আকলিমার কোনো মিল নেই। কোথাও মিল নেই।’
আকলিমা বেগমকে সারা রাত জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছিলাম। একদিকে ছোট বাচ্চার অভিভাবক, অন্যদিকে মহিলা মানুষ, সেজন্য আমরা তাঁকে অবজারভেশনে রেখেছি। আমরা একটু তথ্য-প্রমাণ নেই আগে। মহিলা মানুষ আর যাবে কোথায়?’
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবির সঙ্গে আকলিমার মিল আছে কি না-এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘ওইভাবে মিল হয়তো নেই। এদিকে আমরা ওই মহিলা এবং হেড মাস্টারকে এক জায়গায় করেছিলাম। হেড মাস্টার বলেছেন, ‘ওই মহিলা মারামারির সঙ্গে ওইভাবে জড়িত না।’ মহিলা মানুষ এবং বাচ্চার মা, তাই আমরা একটু সাবধানে আগাচ্ছি। যাতে কোনো সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়।’