‘ডেঙ্গু আতঙ্কে মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ভয়ে থাকি’
‘আমার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ডেঙ্গু আতঙ্কে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। সামনে সমাপনী পরীক্ষা, তাই তাকে বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়।’
ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে আজ শনিবার এনটিভি অনলাইনকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা নাজমা বেগম। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর আতঙ্ক এখন সর্বত্র। বাসাতেও নিরাপদ বোধ করছি না। পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু স্বামীর অফিস আর মেয়ের সামনে সমাপনী পরীক্ষা, তাই যেতে পারছি না।’
আবুল কালাম আজাদ নামের জজকোর্টের একজন আইনজীবী জানান, আশুলিয়ায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। সপ্তাহের প্রত্যেক কর্মদিবসে আশুলিয়া থেকে ঢাকার নিম্ন আদালতে কাজের জন্য আসেন। সব সময় আতঙ্কে থাকেন কখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন।
আবুল কালাম বলেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গুর তীব্রতা অত্যধিক। আমিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যদি এ জ্বরে আক্রান্ত হই তাহলে পরিবার বিপদে পড়ে যাবে।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জাকির হোসেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকায় বসবাস করতে গেলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় মশা কামড় দিলেই আতঙ্কে থাকছি, এই বোধহয় এডিস মশা কামড় দিল।’
জাকির হোসেন আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুর কারণে এ মাসের প্রথমে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আছি। কখন আক্রান্ত হই, আল্লাহ ভালো জানেন।’
আরিফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক জানান, ডেঙ্গুর কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীরা একটু কম আসছে। ডেঙ্গু নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্কের কারণে তারাও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছে না।
নাফিসা নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সে রাজধানীর দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। ডেঙ্গুর কারণে স্কুলে অনেকে আসছে না। তারও স্কুলে যেতে ভয় লাগে। তবে সামনে পরীক্ষা। তাই স্কুলে নিয়মিত যেতে হচ্ছে বলে জানায় নাফিসা।
এদিকে রাজধানীতে মহামারীর আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এ রোগ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব রাজধানীতেই বেশি। ডেঙ্গু রোগীর কারণে চাপ বেড়েছে রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে। ডেঙ্গু রোগীর বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌঁড়ঝাপ করছেন অনেক অভিভাবক।
এদিকে জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফলে যেকোনো কারণে জ্বরে আক্রান্ত হলেই মানুষ ছুটে যাচ্ছে নিকটস্থ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। জ্বর হলেই মনে সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর জন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ২৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।