মুগদা মেডিকেলে সিট নেই, চলছে মশক নিধন
ঢাকা জুড়েই ডেঙ্গু আতঙ্ক। রোগীর ভিড়ে হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাসপাতালে রোগী, স্বজন, চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। আর এডিস মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে মশার ওষুধ।
আজ শনিবার রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিকেলে হাসপাতালে ঢুকেই দেখা গেছে, হাসপাতালের নিচতলা অন্ধকার হয়ে আছে। কারণ তখনই মশা নিধক স্প্রে করা হচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই কর্মী পুরো হাসপাতাল ভবনে মশা নিধক স্প্রে করছেন। হাসপাতালের ভেতরেই লিফটের পেছনে স্বচ্ছ পানি জমে আছে। পড়ছে ছাদ থেকে পানি। যে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জমে আছে পানি, যেখানে বংশ বিস্তার করতে পারে এডিস মশা। ছবি : এনটিভি
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতে এসেছেন। তবে কেউ সিট পাচ্ছেন না। কারণ কোনো সিট খালি নেই।
হাসপাতালের নবম তলার মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দা, লিফটের গেট, সিঁড়ি ও মেঝেতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে সিট না পেয়ে নিজে থেকে বাসা থেকে তোশক এনে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মানিকনগরের বাসিন্দা সুজন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজকে চার দিন হলো জ্বর। আজকে অনেক কষ্টে বারান্দায় সিট পেয়েছি। ডাক্তার বলেছে, ডেঙ্গু। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।’
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জমে আছে পানি, যেখানে বংশ বিস্তার করতে পারে এডিস মশা। ছবি : এনটিভি
সুজন বলেন, ‘ডেঙ্গুতে পুরো শরীর ব্যথায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। খালি বমি আসে। কবে সুস্থ হব জানি না।’
তাহেরা নামের এক নারী জানান, তিন দিন জ্বর থাকার পরে গতকাল এই হাসপাতালে আসি। কোনো সিট না থাকায় নিজেই বাসা থেকে তোশক নিয়ে এসেছি। জ্বরে খুব কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহ দ্রুত সুস্থ করে তুলুক এ প্রত্যাশা করছি।
হাসপাতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান, রোগীর অনেক চাপের কারণে নতুন করে সিট দেওয়া যাচ্ছে না। আর সিট না পাওয়ায় রোগীও ভর্তি করা হচ্ছে না। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক রোগী হওয়ায় এদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের মধ্যেও ডেঙ্গুর আতঙ্ক রয়েছে। আজকে সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাসপাতালটির পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খুবই আতঙ্কে আছি। এই পর্যন্ত আমার হাসপাতালেই ৩০ জন ডাক্তার ও নার্স ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।’
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আজ শনিবার মশা নিধনে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। ছবি : এনটিভি
ডা. আমিন আহমেদ খান বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের চিকিৎসা দিতে দিতে আমার হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বুঝেন অবস্থা।’
জানতে চাইলে জমে থাকা পানি সম্পর্কে পরিচালক বলেন, ‘আমি ওই স্থানটি দেখেছি। সেখান থেকে পানি সরার কোনো সুযোগ নেই। এটা কোনোভাবেই ভালো না। এখান থেকেই জন্ম নিতে পারে এডিস মশা। আমি পিডব্লিউডিকে (গণপূর্ত বিভাগ) এই ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। তারা কাজ করছে না। ব্যাপারটি নিয়ে আমি আবারো কথা বলব।’