ক্যাঙ্গারুশূন্য সাফারি পার্ক, সঙ্গীহীন অরিক্স, জিরাফ
একের পর এক মৃত্যুর কারণে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এখন ক্যাঙ্গারুশূন্য হয়ে পড়েছে। একই কারণে অরিক্স, জিরাফ ও ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্টও এদের যৌন সঙ্গীবিহীন হয়ে পড়েছে।
ক্যাঙ্গারু হলো অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পশু। এরা মারসুপিয়াল গোত্রের অর্ন্তভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। অস্ট্রেলিয়ার আশপাশের কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তেমন দেখা মেলে না এ প্রাণীটির। এরা দুই পা ও শক্তিশালী লম্বা লেজে ভর করে চলে। অন্য প্রাণীর মতো এদের চারটি পা থাকলেও ক্যাঙ্গারুর সামনের দুটি পা ছোট এবং তারা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। এর অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এদের পেটের নিচে একটি থলে থাকে। অপরিণত অবস্থায় বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর, এরা মায়ের পেটের নীচের থলের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠে। একটি পূর্ণবয়স্ক ক্যাঙ্গারু এক লাফে ৩০ ফুট পর্যন্ত এগোতে পারে। এদের ওজন ৮৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, শ্রীপুর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে প্রাণী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয় একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু। পরে এদের সাফারি পার্কের বেষ্টনীর ভেতর ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রথম অবস্থায় দেশি আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিল ক্যাঙ্গারু দম্পতি। দুই বছর পর ২০১৫ সালে এই দম্পতির ঘরেই প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক জন্ম নেয়। পরে কিছুদিনের মধ্যে জন্ম নেওয়া ক্যাঙ্গারুটি মারা যায়। দেশি আবহাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চা দেওয়ার ঘটনাটি ছিল দেশে প্রথম। বাচ্চা জন্মের মাধ্যমে সবার মধ্যেই ফুটে উঠেছিল আশার আলো, তৈরি হয়েছিল সম্ভাবনাও।
এর বছর খানেক পর ২০১৬ সালে ফের এই ক্যাঙ্গারু দম্পতি আরো একটি মাদি বাচ্চার জন্ম দেয়। তবে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে পার্কের একমাত্র পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ক্যাঙ্গারুটি মারা যাওয়ার পর ক্যাঙ্গারু পরিবারটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। এজন্য সেখানে আর ক্যাঙ্গারুর নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হয়নি। পরে চলতি বছরের প্রথম দিকে দুটি মাদি ক্যাঙ্গারুও মারা যায়। এর পর থেকেই ক্যাঙ্গারুশূন্য হয়ে পড়ে নানা বৈচিত্রে ভরপুর দেশের সর্ববৃহৎ এই সাফারি পার্কটি।
একইভাবে এ পার্কে আটটি অরিক্স আনা হলেও বর্তমানে আছে একটি মাত্র মাদি অরিক্স। অরিক্সগুলো দেখতে সাম্বার হরিণের মত। পার্কে আনা ১২টি জিরাফের মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি মাদি সদস্য টিকে আছে। অরিক্স ও জিরাফ পরিবারে এখন কোনো পুরুষ সদস্য নেই। এ ছাড়া এ পার্কে ছয়টি ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট (ছোট দেশি কালো গরুর মতো লম্বা লোমযুক্ত) আনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এ পার্কে শুধু একটি পুরুষ ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট রয়েছে।
যৌনসঙ্গী না থাকায় এসব প্রাণীরা প্রজনন করতে পারছে না। তাই এদের সদস্য সংখ্যাও আপাতত বাড়ছে না। একক যৌনসঙ্গী বিশিষ্ট প্রাণীগুলোর বিপরীত সঙ্গী কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তবিবুর রহমান।
তবিবুর আরো জানান, ক্যাঙ্গারু বিদেশি প্রাণী। বিশ্বের সব জায়গা এদের বসবাসের উপযোগী নয়। দর্শনার্থীদের বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করতেই সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন প্রাণী আনা হয়েছিল। সঠিক পরিচর্যা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারির কারণেই দেশে প্রথমবারের মতো সাফারি পার্কে দুইবার ক্যাঙ্গারু শাবকের জন্ম হয়। এতে একটা সময় ক্যাঙ্গারু নিয়ে আশা ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সবার মধ্যে। তবে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পেরে ধাপে ধাপে মারা যায় ক্যাঙ্গারুসহ কিছু প্রাণী।
তবিবুর রহমান জানান, যেহেতু দেশীয় আবহাওয়া ক্যাঙ্গারুর বসবাসের জন্য উপযোগী নয়, সেহেতু এ মুহূর্তে সাফারি পার্কে আপাতত নতুন করে ক্যাঙ্গারু আমদানি করার কোনো পরিকল্পনা নেই।