কোন পথে গণফোরাম?
একাদশ জাতীয় সংসদের আগে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় ছিল প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। প্রথমে কয়েকটি দল নিয়ে নির্বাচন কেন্দ্র করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব গড়ে ওঠে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। যেখানে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য আর আ স ম আবদুর রবের জেএসডি। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে।
তবে মাঝে অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে সুকৌশলে বি. চৌধুরীর বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম মিলে গড়ে ওঠে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণফোরাম সে সময় সরব ছিল রাজনীতির মাঠে। কিন্তু আসন ভাগাভাগিসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে বিএনপির একটি পক্ষ ও ২০ দলীয় জোটের অনেকেই প্রকাশ্যে গণফোরাম ও ড. কামাল হোসেনকে সরকারের এজেন্ট বলে মন্তব্য করেন। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে গত বছরের ২ নভেম্বর সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আলোচনা না করায়।
নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আসনসহ বেশকিছু আসন বাগিয়ে নেয় গণফোরাম। এমনকি গুম হয়ে যাওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সিলেট-২ আসনটিও বাগিয়ে নেয় গণফোরাম। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর কখনো গণফোরামের কেউ সংসদে যেতে না পারলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ওপর ভর করে দুজন সংসদ সদস্য পায় ড. কামালের দল।
এরপর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর ড. কামালের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা দেয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী কেউ শপথ নেবেন না। যাঁরা শপথ নেবেন তাঁরা বেঈমান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মনসুর। এরপর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জানান, তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু মনসুর দাবি করেন ড. কামাল হেসেনের নির্দেশে তিনি শপথ নিয়েছেন। এরপর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন গণফোরামের প্রতীক নিয়ে সিলেটের ইলিয়াস আলীর আসন থেকে নির্বাচন করা মোকাব্বির খান। তখনো গণফোরাম বলেছে এটা দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। মোকাব্বিরকে বহিষ্কারও করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে গণফোরামের কাউন্সিল ও বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন মোকাব্বির খান। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দল থেকে বের হয়ে যান গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক।
রফিকুল ইসলাম পথিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘যেখানে দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল কেউ শপথ নেবে না, সেখানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং নির্বাচিতদের শপথ নিতে বলা হয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। তাই আমি দল থেকে পদত্যাগ করেছি।’
তবে সব কিছু ছাপিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা— কোন পথে হাঁটছে ড. কামালের গণফোরাম? নির্বাচনের পর দলের সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত কিছুটা সরব ছিল গণফোরাম। এরপর অনেকটা আড়ালে চলে যায় দলটি। দলের বিশেষ কাউন্সিল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া পরিবর্তন আনা হয় দলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যাঁরা গণফোরামে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা ছাড়া দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে থাকা নেতারা অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই দলটির। নতুনদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া ও আমসা আমিন সক্রিয় আছেন। আরো সক্রিয়া আছেন নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ। এর মাঝে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ ও সরকারের করণীয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণফোরাম। সেখানেও দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, নির্বাহী সভাপতি আবু সাঈদ ছাড়া কাউকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি।
গণফোরামের এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টা আসলে তেমন না। আপনারা আমাদের এখন আগের মত কভারেজ দেন না। আমাদের ফলোআপে রাখেন না, তাই হয়তো এমনটা মনে হতে পারে। আমাদের প্রোগ্রাম চলমান আছে।’
সুব্রত চৌধুরি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হতে পারে সেটা হলো, ড. কামাল সাহেবও দেশের বাইরে আছেন। আর আপনারা তো ( সাংবাদিকরা) ড. কামাল সাহেব ছাড়া অন্য নেতাদের তেমন গুরুত্ব দেন না, দিচ্ছেন না। আমরা বেশকিছু কর্মসূচি পালন করেছি। বন্যা নিয়েও আমাদের অনেকগুলো কর্মসূচি ছিল। সামনেও আছে। সেগুলোর দাওয়াত আপনাদের কাছে পৌঁছানো হবে। আশা করি আপনারা কভারেজ দেবেন।’
তাঁকে ও মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আগের মতো রাজনীতির মাঠে কেন দেখা যায় না জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আছি তো। তা ছাড়া বয়স হয়েছে, এখন অনেক সময় শারীরিক অসুস্থতা থাকায় যেতে পারি না। আর মন্টু ভাইয়ের প্রেশার বেশিরভাগ সময় বাড়তি থাকে। সে জন্য উনি অনেক সময় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে পারেন না।’