বৃদ্ধা মাকে আছাড় মেরে হাসপাতালে পাঠালেন ‘অনারেবল পারসন’
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা এলাকায় ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা রাবেয়া খাতুনকে মারধর করে ও আছাড় মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন তাঁরই গর্ভজাত বড় ছেলে আবু লায়েস। এই সময় ছোট ভাই রাজিবকেও মারধর করেন লায়েস ও তাঁর লোকজন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনার পর বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুনকে রূপগঞ্জের গাউছিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাবেয়া খাতুন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাকে খাওন-টাওন দেয় না। আমারে মাইরা আমার জায়গা নিছেগা।’
কে নিয়েছে প্রশ্ন করলে রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আবু লায়েস নিছে। আমারে তো দেয় না এক পয়সাও, দশটা পাইও (পয়সা) দেয় না।’
আবু লায়েসের বিরুদ্ধে অপর পাঁচ ভাই-বোনেরও অভিযোগ সম্পদ দখলের। ছোট ভাই রাজিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি নিজ বাড়ির ফাউন্ডেশন দেওয়ার কাজ শুরু করতে গেলে আমার বড় ভাই আবু লায়েস স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে কাজ বন্ধ করে দেন এবং ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বাড়িতে যেতে পারি না। কাজ এখন বন্ধ আছে।’
রাজিব কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি কাপড়ের ব্যবসা করি। মোকাম থেকে আসার সময় কিছুদিন আগে আমার কাছে কাপড় বিক্রির ১০ লাখ টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নিয়ে যায় আবু লায়েস। আট লাখ টাকা ক্যাশ ছিল এবং দুই লাখ টাকার চেক ছিল। একই সাথে আমাকে অপহরণ করে পূর্বাঞ্চলে ৩০০ ফিট এলাকায় গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। এখন আমি হুমকির মুখে আছি। আতঙ্কিত হয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে আছি। আজ (গতকাল) আমার বাড়ির মাটি নিয়ে রাস্তা করছে সে। আমাকে মারার জন্য হুমকি দিয়েছে। সরকারের কাছে আমি বিচার চাই। জীবনের নিরাপত্তার জন্য কোথায় গিয়ে আমরা দাঁড়াব? জীবননাশের ভয়ে আমি মামলা করতে পারি নাই। কিন্তু এখন করব।’
রাজিবের বড় বোন মাহবুবা সুলতানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা বড় ভাইয়ের অত্যাচারের শিকার। জন্মের পর দেখছি তিনি আমার বাবাকে অত্যাচার করছে। এখন আমার দুই ভাইকে অত্যাচার করছে। বিশেষ করে রাজিবের ওপর অনেক অত্যাচার করছে। আজ থেকে ১০ দিন আগে রাজিবের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বুকের ভেতর পিস্তল আর গলার মধ্যে ছুরি ধরে জঙ্গলে ফেলায় রাখছে। আজকে (গতকাল শনিবার) সকালে খবর পাইছি ওর জায়গা থেকে মাঠি, বালি ও ইট নিয়ে রাস্তা ভরাট করছে। আমার বৃদ্ধ মাকে আছাড় দিয়ে অজ্ঞান করে হাসপাতালে ভর্তি করছে। আমরা সরকারের কাছে বিচার চাই। আমার ছোট ভাই দুইজনের জীবন ভিক্ষা চাই।’’ এই বলে কেঁদে ফেলেন তিনি।
রাজিবের মেজ ভাই খোকন আহমেদও কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার বড় ভাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাঁর নামে বিগত দিনে অনেক মামলা হইছে। কিন্তু বিচার হয় নাই। বিচার না হওয়ার কারণে আমাদের অত্যাচার করছে সে। আমার বাবার বাড়ির রাস্তা ১০-১২ দিন হলো বন্ধ করছে। আমি এলাকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। গণমান্য ব্যক্তিদের রাস্তার ঘটনা জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও রাস্তা খুলে দেন নাই। বাড়ি থেকে আমি বের হতে পারি না। আমার সামনে আজ (গতকাল) ছোট ভাই ও মাকে মারছে। আমি সরকারের কাছে তাঁর উচিত শিক্ষা চাই।’
‘অনারেবল পারসনের’ অস্বীকার
মা ও ছোট ভাইকে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে বড় ভাই আবু লায়েস মুঠোফোনে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটে নাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিল্ডিং বানাতে আমি কোনো বাধা দেই নাই। আমার রাস্তা দরকার, আমার রাস্তা করছি আমি। এটা সম্পূর্ণ এমপি সাহেবের ব্যাপার। তাঁর সাথে কথা বলেন।’
নিজেকে বিশিষ্টজন হিসেবে দাবি করে আবু লায়েস বলেন, ‘‘আমার নাম আবু লায়েস। আপনে নারায়ণগঞ্জ জেলার যত সব পলিটিক্যাল লোক আছে, সবার কাছে আমার সম্পর্কে জানতে পারেন। আমি একজন অনারেবল পারসন এবং আমি প্রথম সারির একজন নেতা। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলার তাঁতীদলের জয়েন্ট সেক্রেটারি, আড়াইহাজার থানা বিএনপির জয়েন্ট সেক্রেটারি আমি। আর বর্তমান যে এমপি আছে নজরুল ইসলাম বাবু সে হলো আমার বাইল্য বন্ধু এবং আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড।’