হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের ঈদ, ‘বাঁচলে অনেক ঈদ আসবে’
প্রতিবছরই ঈদের সময় রাজধানী ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর যেতেন গোলাম মোস্তফা (২৮)। এবারই প্রথম ব্যতিক্রম হলো। গ্রামের বাড়ি যেতে পারেননি তিনি। তিনি একা নন, তাঁর কারণে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠেনি পরিবারের অন্য সদস্যদেরও।
রাজধানীর মুগদার জেনারেল হাসপাতালে শুয়ে এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন মোস্তফা। কয়েক দিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার ঈদের দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মোস্তফাকে ঘিরে বসে আছেন পরিবারের সদস্যরা। মোস্তফাকে পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সবাই। বোঝাই যায়, ঈদের আনন্দ ঝিলিক দেয়নি তাঁদের ম্লান মুখে; বরং চিন্তার বলিরেখা ভারি সবার। ছেলে কখন সুস্থ হবে, তার পর ঘরের ছেলেকে ঘরে নিয়ে যাবেন।
মোস্তফার মতো আরো অনেকেরই ঈদের দিনটি কাটছে এই হাসপাতালে। কেউ ১০ দিন, কেউ এক সপ্তাহ, কেউ বা পাঁচ দিন ধরে টানা হাসপাতালে আছেন স্বজনদের পাশে। রোগীর পাশে থাকতে থাকতে নিজেরাও একপ্রকার রোগী হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গতকাল রোববার জানানো হয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪১ হাজার ১৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ৩২ হাজার ৩৮৪ জন। বর্তমানে সারা দেশে শিশুসহ আট হাজার ৭৫৪ জন ডেঙ্গুর কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এর মধ্যে মারা গেছেন ৪০ জন। কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে ১০ এবং জুলাইতে ২৪ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৩৯ জন ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর বাইরে, তবে ঢাকা বিভাগের মধ্যেই।
সকালে মুগদা হাসপাতালে গোলাম মোস্তফার বাবা মোতালেব হোসেন (৫৫) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাত দিন ধরে ছেলেটাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। হাসপাতালে কোনো সিট নেই। কাপড় বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও নিরুপায়।’
‘সব সময় ছেলেদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর যেতাম। কিন্তু এবার নিয়তি এখানে রেখেছে। তার পরও ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরলে ঈদের আনন্দের চেয়ে কম হবে না,’ যোগ করেন মোতালেব হোসেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সুস্থতা কী ব্যাপার, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বুঝেছি। অসুস্থ থাকলে ঈদের দিনও ভালো লাগে না। তবে দুপুরে খালার বাড়ি থেকে খাবার আসবে। ডাক্তার পরামর্শ দিলে খাব।’
একই হাসপাতালে জুঁই নামের এক নারী ডেঙ্গুতে অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের দুদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় প্রতিদিন আতঙ্কে আছি। বাঁচতে পারলে জীবনে অনেক ঈদ আসবে, তখন অনেক আনন্দ করব।’
আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড), ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি মেডিকেলে দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে স্বজনদের ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে। কেউ চেষ্টা করছেন রক্ত সংগ্রহ করতে, কেউ রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন, আবার কারো চিন্তা এই ছুটির সময়ে আরো বড় কোনো বিপদে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন তো? কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন, প্রিয়জনকে সুস্থ করে নিয়ে কখন বাসায় ফিরবেন।