কিশোরগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে দুই চাচাতো ভাই নিহত
কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর গ্রামে দুইপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই চাচাতো ভাই নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকালে ওই গ্রামের শ্যামপুরপাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটে।
নিহত দুই যুবক হলেন ওই গ্রামের ফোরকান মিয়া (২৮) ও শরীফ মিয়া (৩৫)। সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়া ছাড়াও ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়ে শিশু ও নারীসহ অন্তত ১৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আজ দুপুরে ভাগলপুরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত দুই ভাইয়ের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। এরপর পুলিশ জানায়, ফোরকানের শরীরে ৩১টি ও শরীফের শরীরে ১৪টি স্থানে ছররা গুলি বিঁধেছে। দুজনের বুকে, মাথায় ও হাতে এসব গুলি লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁরা।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে জানান, জোড়াখুনের ঘটনায় এখনো থানায় মামলা করা হয়নি। আগামীকাল কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দুই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। হত্যাকারীরা গা ঢাকা দেওয়ায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাইজচর শ্যামপুরপাড়া গ্রামের মুন্সি বাড়ি ও বাক্কার মেম্বার গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আজ সকালে মাইজচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাক্কার মিয়ার ভাই চাল ব্যবসায়ী মওলা ধান কেনার কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মুন্সি বাড়ি গোষ্ঠীর ফারুক ও তাঁর ভাই আনিস তাঁকে আটক করে মারধর করেন। খবর পেয়ে বাক্কার মেম্বার গোষ্ঠীর লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ফারুকসহ মুন্সি বাড়ি গোষ্ঠীর কয়েকজন বন্দুক দিয়ে নির্বিচার গুলি ছোড়ে। এতে বাক্কার মেম্বারের পরিবারের সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন কমবেশি ছররা গুলিতে বিদ্ধ হন।
আহতদের প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শরীফ ও ফোরকানকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের দুই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
গুলিবিদ্ধরা হচ্ছেন শাহ জামাল (৩৫), শাফায়াত উল্লাহ (১৮), আজিজুর রহমান (১৫), মো. জালাল মিয়া (৫০), স্বপন মিয়া (২৬), সালমা বেগম (৩৮), নীলা (১৩), নূর আলম (২৬), তৌহিদ মিয়া (৪০), আফিয়া খাতুন (৫৫), শাফায়াত উল্লাহ-২ (২০), স্বপন মিয়া-২ (৩০), কামাল মিয়া (৩৫), রহিমা বেগম (৫০) ও মুর্শিদ মিয়া (৪৮)। নিহত শরীফ দুই সন্তানের এবং ফোরকান এক সন্তানের জনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, ফারুক ও তাঁর বাহিনীর লোকজনের বিরুদ্ধে হাওরের জলযানে খুনসহ ডাকাতি, গরু চুরি ও ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন ও কুলিয়ারচর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।