‘কিছুই বের করতে পারি নাই, জানডা নিয়া আইছি’
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে কয়েক হাজার ঘর। এ সময় আগুন নেভাতে গিয়ে এবং মালামাল বের করতে গিয়ে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট।
মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে হাজারো মানুষ। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতের আঁধার ভেদ করে দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল আগুনের লেলিহান শিখা। এই আগুনে কারো পুড়েছে ঘর, কারো গেছে সবই। আগুন লাগার মুহূর্তে কেউ ছিলেন বস্তিতে, আবার কেউ ছিলেন বাইরে।
বাসিন্দারা জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হঠাৎ করেই আগুন লাগার সোরগোল কানে আসে তাদের। পেছনে ফিরে তাকানোরও সুযোগ ছিল না, ক্ষণিকের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এই ঘর থেকে সেই ঘরে। তারপর পুরো বস্তিতে।
বস্তির বাসিন্দা চল্লিশোর্ধ্ব এক নারী বলেন, ‘আমার বাচ্চারা এসে বলল, মা বস্তিতে আগুন লাগছে, তুমি ওইদিকে যাইও না। তখন ৭টা বাজে। আমার আর কিছু নাই, সব শেষ।’
সেখানে থাকা ত্রিশোর্ধ্ব ও পঞ্চাশোর্ধ দুই নারী আহাজারি করে জানালেন, তাঁরাও ঘর থেকে কোনো কিছু বের করতে পারেননি। তাদের সবকিছু পুড়ে গেছে।
সহায়-সম্বল তো দূরে থাক নিজের জীবন বাঁচানোই দায় ছিল আগুনের তীব্রতার কাছে। খেটে খাওয়া অনেকেই নিজের কর্মস্থল থেকে শুনেছেন মাথা গোজার ঠাঁইটুকু পুড়ে যাওয়ার খবর। অনেকেই অভিযোগ করে বলে, ফায়ার সার্ভিস এসেছে দেরিতে। বস্তির বাসিন্দা এক যুবক বলেন, ‘দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসছে। একটা পাইপ নামাইছে। একটা পাইপ দিয়া কি এই আগুন নিভব?’
এই বস্তিরই বাসিন্দা কিশোরগঞ্জের রিপন। তিনি দুই সন্তান আর স্ত্রীকে রক্ষা করতে পেরেছেন। আর যে রিকশার ওপর ভর করে চলত তাঁর জীবিকা, আগুনের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারা সহায় সম্বল আর সন্তানদের নিয়ে সেই রিকশাতেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন অসহায় রিপন। তিনি বলছিলেন, ‘কিছুই বাইর করেত পারি নাই ভাই। যা পারছি বাইর করছি। আর জানডা নিয়া বাইর হইয়া আসছি। এখন কই থাকমু ভাই।’
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে যে স্কুলটা আছে সেটা বঙ্গবন্ধু স্কুল এবং আশপাশে আরো স্কুল আছে। সেই স্কুলগুলোতে তাঁরা থাকবে। তারা খাবে কী? এ ব্যাপারে আমি এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলাপ করেছি। সিটি করপোরেশনকেও আমি বলেছি। রান্না করে হলেও তাদের খাবারের ব্যবস্থা আমরা করব।’
তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয় পুরো বস্তি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, বস্তির মধ্যে যে ঘরবাড়ি ছিল সেগুলো অস্থায়ী প্রকৃতির। মূলত বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি। এগুলোতে আগুন লাগলে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সবাই একসঙ্গে কাজ করায় অতি দ্রুততম সময়ে মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে।
তবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে তা তদন্তের পরই বলা যাবে বলে সাংবাদিকদের জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।