ফরিদপুরে চাচা-ভাতিজার খুনিদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা রওশন আলী মিয়া ও তাঁর ভাতিজা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র মিরাজুল ইসলাম তুহিনের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে হতাহতদের পরিবার।
আজ সোমবার দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন নিহত মিরাজুল ইসলাম তুহিনের বড় বোন আসমা বেগম।
এ সময় আসমা বেগম বলেন, গত ১০ আগস্ট কাইচাইল গ্রামের মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নামাজ শেষ করে আমাদের পরিবারের লোকজন বের হওয়ার সময় অতর্কিতে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় হানিফ ও হাসানের নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী। তাদের ছোড়া গুলিতে ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়। এদের মধ্যে সবাইকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আমার ভাই তুহিন ও চাচা রওশন নিহত হন। বাকি আহতরা এখনো ঢাকা ও ফরিদপুরে চিকিৎসা চলছে।
আসমা বেগম আরো বলেন, হানিফসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। বাকি আসামিদের আটক করে দ্রুত আইনের হাতে নেওয়া ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই প্রশাসনের কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাইচাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠান্ডু, তুহিনের বাবা রায়হান মাতুব্বর, নিহত রওশনের বড় ভাই ও সমান মাতুব্বর, রওশনের স্ত্রী সামিয়া খানম, তাঁর মেয়ে তৃষ্ণা খানমসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
পরে নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে আধা ঘণ্টাব্যাপী একটি মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, কাইচাইল ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন ওরফে ঠান্ডুর সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হানিফ মিয়া ওরফে হৃদয়ের বিরোধ চলছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ওই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে হানিফের সমর্থক মহিদুলকে হত্যা করেন ঠান্ডুর সমর্থকরা। এই ঘটনায় ঠান্ডু ও তাঁর সমর্থকদের মামলায় আসামি করা হয়। এতে বিরোধ আরো বাড়ে।
সংঘর্ষের ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, হানিফ মিয়া ও তাঁর ভাই জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক হাসান মিয়া গত ১০ আগস্ট একটি মাইক্রোবাসে করে এলাকায় আসেন। তাঁরা স্থানীয় মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে কোরবানির আয়োজন নিয়ে পরামর্শরত তাঁর সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তাঁর দুই সমর্থক নিহত এবং আটজন আহত হন।
তবে হানিফ ও হাসান মিয়ার পক্ষের লোকজন দাবি করেছেন, ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধের কারণে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছাড়া। হানিফ মিয়া হৃদয় ও তাঁর ভাই হাসান মিয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে ১০ আগস্ট শনিবার বিকেল ৫টায় কাইচাইল মধ্যপাড়া মাদ্রাসা এলাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় কবির হোসেন ঠান্ডুর চাচা রওশন, রুস্তম, রায়হান, মাওলা ও বিপ্লবসহ ১০ থেকে ১২ জন লোক তাঁদের বাধা দেন এবং গাড়িতে হামলা চালান। একপর্যায়ে হানিফ মিয়া তাঁর কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে এলোপাতারি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্ত্যবরত চিকিৎসক শাহিন মামুন রওশন আলী মিয়া ও তুহিন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করে।
এঁদের মধ্যে রওশন আলী মিয়া ফরিদপুর শহরের অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন।