গাজীপুরে বসতঘরে বিস্ফোরণ : দগ্ধ শ্বশুর-জামাতার মৃত্যু
গাজীপুরের এক বাড়িতে চুলার লাইনে গ্যাস লিকেজের কারণে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের দুইদিন পর দগ্ধ শ্বশুর ও জামাতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আজ সোমবার।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন গাজীপুর মহানগরীর সালনা কাথোরা মন্ডলবাড়ি এলাকার ইয়াকুব আলী মন্ডল (৬০) ও তাঁর শ্বশুর নূর মোহাম্মদ (৮০)। এ নিয়ে ওই ঘটনায় ইয়াকুব আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগমসহ (৫০) দগ্ধ তিনজনের সবাই মারা গেছেন।
নিহত ইয়াকুব আলীর পুত্রবধূ সাদিয়া আফরিন সাথী জানান, গত শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে বাসায় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই বাসার গৃহকর্তা ইয়াকুব আলী মন্ডল (৬০) ও তাঁর স্ত্রী আকলিমা বেগম (৫০) এবং ইয়াকুব আলীর শ্বশুর নূর মোহাম্মদ (৮০) আগুনে দগ্ধ হন।
দগ্ধ তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার রাত (শনিবার) পৌনে ৮টার দিকে আকলিমা বেগম মারা যান।
আকলিমার মৃত্যুর দুইদিন পর আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে তাঁর স্বামী ইয়াকুব আলী মারা যান। ইয়াকুব আলীর মৃত্যুর প্রায় পাঁচ বা ছয় মিনিট পর তাঁর শ্বশুর নূর মোহাম্মদও মারা যান। এ নিয়ে ওই ঘটনায় দগ্ধ তিনজনের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমীর চন্দ্র সূত্রধর ও নিহতের স্বজনরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর সালনা কাথোরা মন্ডলবাড়ি এলাকার একতলা একটি ভবনের একটি ইউনিটে ইয়াকুব আলী সপরিবারে বসবাস করতেন। শুক্রবার রাতে ওই বাসার একটি কক্ষে ইয়াকুব ও তাঁর স্ত্রী এবং পাশের কক্ষে স্বপন ও তাঁর নানা ঘুমিয়ে ছিলেন। শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে গ্যাস বিস্ফোরণ হয়ে ঘরের দরজা জানালা ভেঙে ছিটকে পড়ে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায় এবং কক্ষ থেকে দগ্ধ ও আহতাবস্থায় অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যে আগুনে দগ্ধ ইয়াকুব আলী, তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
আগুনে ইয়াকুব আলীর শরীরের শতভাগ, স্ত্রী আকলিমার শরীরের ৯৫ শতাংশ ও শ্বশুর নূর মেহাম্মদের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে যায়।
বিস্ফোরণের ঘটনার সময় ছিটকে আসা কাঠের আঘাতে ইয়াকুব আলীর ছেলে মেহেদী হাসান স্বপন (২২) আহত হয়। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আগুনে ঘরের খাট, বিছানাপত্র, কাপড়-চোপড়সহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে। তবে বিকট শব্দ ও তাঁদের দগ্ধ হওয়ার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহীনুর ইসলাম জানান, আগুনের এ ঘটনা তদন্তের জন্য ঘটনার পর গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. শরিফুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চুলার গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে নির্গত হয়ে গ্যাস পুরো ঘরে ছড়িয়ে আটকা পড়ে। পরে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর সময় বা বৈদ্যুতিক শটসার্কিটের কারণে জমাট থাকা গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তবে তদন্তের পর অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।