আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের কাছে প্রতারক সরকারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা এখন বর্গীদের মতো লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে অত্যন্ত কৌশলে দেশের চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করছে সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ ও প্রতারক সরকারে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে বলা হয়, ‘ফর দ্য পিপল, অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল’। কিন্তু এই সরকার এখন হয়ে গেছে, ফর দ্য লুটেরাজ, অব দ্য লুটেরাজ, বাই দ্য লুটেরাজ। এখানে লুট ছাড়া আর কিছু নেই। একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত শুধু লুটপাট করে চলছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার (এনআরসি) আয়োজিত ‘আমার দেশ আমার শিল্প’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

এ সময় বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমরা যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ করি, তখন আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন হলো, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমৃদ্ধ শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে জনগণের কর্মসংস্থান এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং সে লক্ষ্যেই স্বাধীনতার পর থেকে আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশা নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে এসেছি।’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে পোশাক শিল্পের একটা বিপ্লব ঘটেছিল। কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যে আওয়ামী লীগের সরকার ছিল, তাদের তথাকথিত সমাজতন্ত্রের মূলনীতি ছিল পুরোপুরি একটা লুটপাট এবং দলীয় লোকেরা শিল্পগুলোকে জাতীয়করণ করে পুরোপুরিভাবে তাদের জায়গা করে নিয়েছিল। সে সময় আমরা দেখেছি, শিল্পের উন্নয়ন তো হয়নি বরং নিচের দিকে গেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘যে চামড়ার ওপরে আমাদের দরিদ্র এতিম সন্তানরা নির্ভরশীল, তাদের একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারুরূপে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে এখন অনেক জিনিস বেরিয়ে আসছে। এমনকি ভারতবর্ষের পত্রিকাতে যে খবরগুলো বেরিয়েছে, সেগুলোতে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের দেশের বেনাপোল থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে বানতলা নামের একটি চর্ম শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়েছে। যেটা এক সময় ছোট শিল্পনগরী ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটিকে শিল্প বা বৃহৎ লেদার সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতের অন্যান্য জায়গায়, যেমন- কানপুরে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর স্থানান্তর করা হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত নিকটবর্তী বানতলায়। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এটিকে ‘নয়া দিগন্ত’ নামে অভিহিত করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের শিল্পগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে, মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বলতে শুধু গার্মেন্টসকে বোঝানো হচ্ছে। এখান থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত বেরিয়ে আসছেন, অন্যান্য কোনো শিল্প প্রসার লাভ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ডেভেলপ করতে পারব না। আমরা সত্যিকার অর্থে ইন্ডাস্ট্রিতে ডেভেলপ করতে চাই। তা অবশ্যই সমগ্র শিল্পের প্রসার লাভ করার মাধ্যমে। আমাদের যদি শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হয়, তবে আমাদের বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সরকার চামড়াগুলোকে প্রসেসিং করার কোনো সুযোগ দেয়নি ট্যানারি মালিকদের। আমরা আরো শুনতে পেয়েছি যে, চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যাংক লোন দেওয়া হয়নি বিধায় তারা চামড়া কিনতে পারেনি।’

এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে দেশপ্রেমিককে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া সরকার অর্থাৎ, নির্বাচন করে জনগণের পছন্দ করা প্রতিনিধিকে নির্বাচন করতে হবে। এজন্য সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকার দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য সর্বপ্রথম ইলেকশন কমিশনকে ভেঙে দিতে হবে। আর সেজন্য প্রথমে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।