কারাগারে আত্মহত্যা করেন পলাশ, অব্যবস্থাপনাও দায়ী
প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে আটক আইনজীবী পলাশ কুমার রায় পঞ্চগড় জেলা কারাগারে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এ আত্মহত্যার ঘটনায় পঞ্চগড় কারাগার কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাও দায়ী।
আইনজীবী পলাশ কুমারের নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। আদালতে প্রতিবেদনের অংশবিশেষ পড়ে শোনান রিট আবেদনকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক।
পরে কারাগারে অনিয়মের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘আপাতভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে পঞ্চগড় কারাগারের অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয়, কারাগারের ভেতরে গ্যাস লাইটারের অবাধ ব্যবহার রয়েছে। এ ছাড়া কারাগারে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। কারাগারের ভেতরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা নেই। এমনকি কারাগারে জেল সুপার থাকেন না; বরং কারা হাসপাতালে ডিপ্লোমা নার্সের দায়িত্ব পালন ও একটি খুনের মামলার আসামিকে দিয়ে সার্জিক্যাল বিভাগের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে।
আইনজীবীর দাবি, সুচিকিৎসা পেলে অগ্নিদগ্ধ পলাশ কুমারকে বাঁচানো যেত। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের গড়িমসি ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সময়মতো চিকিৎসা না করায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আইনজীবী সুমন জানান, অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা লেগেছে তাঁর চিকিৎসা শুরু করতে। এ পুরো সময়টা তাঁকে এ কারাগার থেকে ওই কারাগারে টানাহেঁচড়া করা হয় এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় কারা কর্তৃপক্ষ।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, যদি দ্রুততম সময়ে আইনজীবী পলাশের চিকিৎসা শুরু করা যেত, তাহলে তিনি বাঁচতেন কি না সেটি নিশ্চিত নয়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করা। আগে চিকিৎসা পরে দাপ্তরিক কাজ।
চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করার অভিযোগে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে আটক করে পঞ্চগড় পুলিশ। ২৬ মার্চ তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত। এর এক মাস পর ২৬ এপ্রিল কারা হাসপাতালে বাথরুমে অগ্নিদগ্ধ হন পলাশ। এরপর ৩০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু হয় পলাশের। ৮ জুন এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমনের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।