‘২১ আগস্ট আল্লাহ নিজ হাতে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছেন’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ‘সেদিন মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজ হাতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার জীবন রক্ষা করেছেন। আর একটি টেবিল ছিল; তার উছিলা মাত্র। এ টেবিলটি না থাকলে সেদিন নেত্রীকে হয়তো আমরা হারাতাম।’
আজ বুধবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় মায়া চৌধুরী এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আয়োজনে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
২১ আগস্টের লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মায়া চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাসের ভয়াবহ এ ঘটনার পর আমি জীবিত আছি— এটাও আমার কাছে বড় বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। সেদিন মহান আল্লাহ কীভাবে ঢাল তৈরি করে আমাদের নেত্রীকে রক্ষা করেছেন, তা নিজ চোখে দেখেছি।’
শেখ হাসিনার প্রাণে বেঁচে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগের এ কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমি এ সমাবেশ নিয়ে আগের দিন নেত্রীর সঙ্গে কথা বলি। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে বললেন- সমাবেশের মঞ্চ বানানোর জন্য তোমরা কি ট্রাক আনো, এটাতে উঠলেই নড়বড় করে। একটু বড় ট্রাক আনতে পারো না। তাহলে তো আরো বেশি নেতা মঞ্চে বসতে পারে। এতটা ঠেলাঠেলি হয় না। অনেক সময় পেছন থেকে ধাক্কাধাক্কিতে আমি সামনের দিকে পড়ে যাই। তা ছাড়া মঞ্চের সামনে একটি টেবিল দিতে পারো।’ তিনি বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) এ নির্দেশ পেয়ে আমি ধোলাইখালের পরিবর্তে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে একটি নতুন ট্রাক এনে মঞ্চ তৈরি করি। এ ছাড়া আমাদের পার্টির অফিস থেকে একটি টেবিল এনে সামনে দেই। এই টেবিলটিই নেত্রীকে সেদিন বাঁচিয়ে ছিল।’
শেখ হাসিনাকে রক্ষার তিনটি ঢালের কথা উল্লেখ করে মায়া বলেন, ‘নেত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পরই আমরা মঞ্চ থেকে নেমে মিছিল শুরু করার উদ্যোগ নেই। এমন সময় ফটো সাংবাদিক গোর্কি এসে বললেন- আপা একটু থামেন। আমরা ছবি নেব। গোর্কির এ কথা বলার সঙ্গেই সঙ্গেই বিকট এক আওয়াজে গোটা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেপে উঠল। আমি এর আগে এ ধরনের বিকট আওয়াজ আগে শুনিনি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীরা ছটফট করছেন। সাংবাদিক গোর্কি না থামালে নেত্রী হয়তো সামনে যেতেন, আর দুই পা সামনে গেলেই তাঁর ওপর গ্রেনেডটি পড়ত।’
মায়া বলেন, ‘গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর পরই মঞ্চের পেছন থেকে প্রচণ্ড ধাক্কা আসে। নেত্রী ওই টেবিলটি আঁকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করেন। টেবিলটি না থাকলে তিনি নিচে পড়ে যেতেন। আর তাঁর উপরই গ্রেনেডটি পড়ে বিস্ফোরিত হতো। কাজেই আমি সেদিন দেখেছি- আল্লাহ তায়ালা শেখ হাসিনাকে একটি বড় ট্রাক, সাংবাদিক গোর্কি ও একটি টেবিলকে উছিলা বানিয়ে নিজ হাতে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছেন।’
নিজের জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই উল্লেখ করে মায়া চৌধুরী বলেন, ‘অনেকেই রক্ত দিয়ে নেত্রীর জীবন বাঁচানোর কথা বলেন। কিন্তু প্রয়োজনে কে কতটা ত্যাগ স্বীকার করেন, এটাই দেখার বিষয়। আমি ও হানিফ ভাই ২১ আগস্ট নেত্রীর জীবন বাঁচাতে নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে মানবঢাল বানিয়ে ভুমিকা রাখতে পেরেছি। এটাই আমাদের জীবনের বড় প্রাপ্তি। জীবনে আর কিছুই চাই না।’