নারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় সেলিমা-নিপুনের নেতৃত্বে কমিটি
দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কমিটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান উপদেষ্টা, সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন চন্দ্র রায়কে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এ তথ্য জানান।
এ সময় সেলিমা রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল অঙ্গীকারবদ্ধ। গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ রাজনৈতিক দল সামাজিক অধঃপতনের অরাজক পরিস্থিতির সময় নির্বিকার বসে থাকতে পারে না। খুন-ধর্ষণের পৈশাচিক বিকৃতি আমাদের রাষ্ট্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাষ্ট্র সমাজের সর্বত্র ঘৃণা ছড়ানোর ফলে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ সমাজবিরোধীরা আশকারা পাচ্ছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি জনমনে গভীর উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।’
সেলিমা রহমান আরো বলেন, ‘ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার কারণে শিশুহত্যার ঘটনা এখন সংবাদপত্রের উল্লেখযোগ্য সংবাদ। অভিভাবকরা মেয়ে ও শিশুসন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্য দিন কাটাচ্ছেন। আইনের প্রয়োগ নেই বলেই সমাজবিরোধীরা ধর্ষণ-নিপীড়নে উৎসাহিত হচ্ছে। আইনের শাসনের অভাবে মাদকের বিস্তার ও মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে। আমরা মনে করি, এই কারণগুলো সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে।’
অনাচারমূলক দুঃশাসনে জবাবদিহির অভাবের কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বিদ্যমান গণতন্ত্রশূন্য দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নব্য ফ্যাসিবাদী শাসনে একদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই, অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত নারী ও শিশুরা দুর্বৃত্তদের লালসার শিকার হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলেই নারী ও শিশু নির্যাতন অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। কারণ, অধিকাংশ নির্যাতনকারী সরকারি দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে এই ধরনের জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও তাদের কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারছে না। এরা আইনের আওতার বাইরে থাকছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রিয় বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে ধর্ষণের লীলাভূমিতে। বখাটে প্রেমিক, পাড়ার মাস্তান, কর্মকর্তা, বাস কন্ডাক্টর, শিক্ষক, মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ কিছু বিকৃত মানুষের লালসার শিকার নারী ও শিশুরা। নয় মাস বয়স থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা কেউ ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বাকপ্রতিবন্ধী ও ভবঘুরে পাগলও। রাস্তাঘাট, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, এমনকি পুলিশ স্টেশন—কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়।’
সেলিমা আরো বলেন, “এভাবে বর্তমান সরকারের আমলে জিম-মিম-তনু-মিতু-খাদিজাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে আছে। শুধু গত ছয় মাসেই ৪৯৬ মেয়ে শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জনকে। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’-এর জাতীয় কমিটি গঠন করেছে।”
শেষে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয় :
১. নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমকে শক্তিশালী এবং বেগবান করা।
২. নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৩. দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ নারী ও শিশু। এ জনগোষ্ঠীর জীবন সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ। তাঁদের মধ্যে যারা ভিকটিম হচ্ছেন, তাঁদের আইনগত ও চিকিৎসাগত সহায়তা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
৪. বিশেষভাবে দুস্থ ভিকটিমদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য আইনগত সহায়তা দেওয়া।
৫. ভিকটিম নারী ও শিশুদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখা।
৬. ‘নারী নির্যাতন করা অন্যায়’ এটি পরিবার থেকে শিশুকে শেখানো।
৭. নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন নারী শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল এবং এখন এ কমিটির লক্ষ্য, নারীর বর্তমান অবস্থা থেকে আরো বেশি ক্ষমতায়নে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৮. নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা।
৯. যেকোনো গণমাধ্যমে আলাপচারিতা ও পারস্পরিক কথাবার্তায় যাতে নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার না পায়, সে ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গড়ে তোলা।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আহ্বায়ক আফরোজা আব্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, অ্যাডভোকেট নিপুণ চন্দ্র রায় প্রমুখ।