লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ, দাবি মানলে যাবে মিয়ানমার
সকাল ৯টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। তার আগেই দলে দলে রোহিঙ্গারা জড়ো হতে থাকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সেই খোলা প্রান্তরে। সেই অনুষ্ঠান শেষ হয় মোনাজাতের মাধ্যমে। ওই মোনাজাতে অংশ নিয়ে কাঁদতে থাকে সবাই। বৃদ্ধ আর যুবকদের পাশাপাশি শিশুদের চোখেও ছিল পানি। তারা দেশে ফিরতে চায়। সেজন্য মিয়ানমারকে পাঁচ দফা দাবি মানতে হবে।
মিয়ানমারের রাখাইনে ভয়াবহ সহিংস ঘটনার দ্বিতীয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে উখিয়ার মধুরছড়া এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খোলা মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু উপস্থিত ছিল। এ সময় নিজ দেশে ফিরতে পাঁচ দফা দাবি জানায় রোহিঙ্গারা।
দাবি আদায়ে উত্তাল ছিল রোহিঙ্গাদের এ সমাবেশ। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় দাবি আদায়ের স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে যায় সমাবেশস্থল।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারে সব রোহিঙ্গা ফিরে যেতে রাজি রয়েছে। তবে তাদের যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শর্ত পূরণে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চান তারা।
রোহিঙ্গাদের পাঁচ দফা দাবি হলো- নাগরিকত্ব দেওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, নিজেদের ভিটেবাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নির্যাতনকারীদের আন্তর্জাতিক অদালতে বিচার করা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ, মাস্টার আবদুর রহিম, মৌলভী ছৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা নারী নেত্রী হামিদা বেগমসহ আরো অনেকে।
এ সময় রোহিঙ্গা নেত্রী হামিদা বেগম বলেন, ‘পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে। এখন আমরা যদি নিজেদের দাবি আদায়ে একত্রিত না হই, তাহলে আমাদের দাবি আদায় হবে না।’
এ ছাড়া সমাবেশে ২০১৭ সালে রাখাইনে গণহত্যা ও ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে জড়িত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
এ সময় মিয়ানমারের নাগরিক মর্যাদা প্রদানসহ দাবি করা পাঁচটি শর্ত মেনে নিতে মিয়ানমার সরকারকে জোরালোভাবে চাপ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংলাপ চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। পরে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এর আগে আজ সকাল থেকে দলে দলে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও নানা স্লোগান নিয়ে সমাবেশে যোগদান করে রোহিঙ্গারা। নানা রকম স্লোগানে মুখর ছিল পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা। এ ছাড়া উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখাইনে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। ওই সমাবেশগুলোতে নাগরিকত্ব ও ভিটেমাটি ফিরিয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন করার দাবি জানানো হয়।
২০১৭ সালের এ দিন থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। এখন পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করছে।