ডাক বিভাগই একমাত্র বাড়ির দরজায় যাচ্ছে
‘আমিই একমাত্র বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। আর তো কেউ বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে না। দরজায় গিয়ে বলছি, আপনার পার্সেল বুঝে নিন। এভাবে বাড়ি বাড়ি যাওয়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই আমি মানেই বাংলাদেশের ডাক বিভাগ আর তার সেবা।’
শনিবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ‘ডাক ভবন’ নিয়ে কথোপকথনের সময় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার পোস্ট অফিস আছে ডাক বিভাগের। এই ১০ হাজার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আমরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পার্সেল দিয়ে আসছি। এভাবে পার্সেল পৌঁছে দেওয়া শুধু আমাদের জন্যই সম্ভব। কারণ, আমার তো গ্রামে গ্রামেই পোস্ট অফিস আছে। আপনি পার্সেল পাঠাবেন? দূর থেকে জিনিস কিনবেন? এসব ডাক বিভাগের মাধ্যমেই আপনি ঘরে বসে পাবেন।’
‘ডাক বিভাগে আমাদের ৪৩ হাজার জনবল আছে। এই জনবলের যথাযথ ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় আয় বাড়ানো সম্ভব। আমরা সেদিকেই হাঁটছি।’ যোগ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রশাসনিক এলাকায় গেলে ১৪ তলা বিশিষ্ট বিশাল বড় এক লাল টুকটুকে ডাকবক্স আপনার চোখে পড়বে। দেখে আপনার ভাবনায় আসতে পারে ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যুগেও এতবড় ডাকবক্স। আগ্রহ নিয়ে ডাকবক্সের দিকে এগিয়ে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন এটা ডাকবক্স আকৃতির নবনির্মিত ‘ডাক ভবন’!
নবনির্মিত ডাকবক্স আকৃতির এই ডাক ভবন নিয়ে কথা হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে। চিঠি চালাচালির ধরন বদলেছে, প্রযুক্তির হাওয়ায় ভাসছে পৃথিবী। এখন আর কাগজে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে না অধিকাংশ মানুষ। নিমিষেই ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে কথা চালাচালি হচ্ছে। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে থেকেও ভিডিও কলের মাধ্যমে নিমিষেই প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হচ্ছে যখন তখন। গোটা দুনিয়া যেন হাতের তালুতে বন্দি। ঠিক তখুনি এমন দারুণ এক স্থাপত্যশৈলী দিয়ে মোড়ানো নবনির্মিত ডাক ভবন।
এমন এক পরিস্থিতে কেন এই পরিকল্পনা বা চিন্তা এসব নিয়েও কথা হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে। কথার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘ডাক বিভাগ তো শুধু চিঠির ভেতরে সীমাবদ্ধ নয়। আরো অনেক ধরনের কাজ আছে ডাক বিভাগের। আমি তো আগামীতে ডাক বিভাগের বিশাল সম্ভাবনা দেখি। যুগ বদলেছে, পাল্টেছে যোগাযোগের ধরন। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও (ডাক বিভাগ) পাল্টে যাচ্ছি। আমাদের মানি অর্ডার সেবা আছে। আরো দ্রুত গতিতে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে মুঠোফোন ভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’ চালু করেছি। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে আরো অনেক নতুন কিছু যুক্ত হবে, যা আপনিই চাইবেন।’’
নবনির্মিত ডাক ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেই আপনি দেখতে পারবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং চার জাতীয় নেতার ছবি খোদাই করা। বড় বড় ডাকটিকেটও দেয়ালে খোদাই করা। ডাক ভবনই যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। এই নিয়ে কথা উঠতেই মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নবনির্মিত ডাক ভবনের স্থাপত্যশৈলী এমনভাবে করা যা আমাদের উজ্জীবিত করবে সহজেই। এই ভবনের স্থাপত্যশৈলী ডাক বিভাগের ডিজিটাল যাত্রাকে গতিশীল করে তুলবে বলে আমি আশা করি।’
কথোপকথনের ফাঁকে ফাঁকেই আসে চিঠির প্রসঙ্গ। চিঠির কথা উঠতেই মন্ত্রী ফিরে যান লেখাপড়ার বেলায়। জানালেন, চিঠি নিয়ে বাবা-ছেলের স্মৃতির কথা। বললেন, ‘আমি তখন ঢাকাতে লেখাপড়া করি। বাবা আব্দুল জব্বার তালুকদার থাকতেন গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। লেখাপড়ার খরচ পাঠানোর জন্য পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বাবার কাছে চিঠি লিখতাম। সেই চিঠি পেয়ে বাবা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। আহ, কী দিন ছিল আমাদের!’
২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রায় পৌনে এক একর জমির ওপর কাজ শুরু হয় ডাক ভবনের। প্রথমে আট তলা নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল ডাক বিভাগ। কিন্তু বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবর্তন হয়ে যায় চিন্তা। মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখি ওই এলাকায় ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করার অনুমোদন আছে। পরে ওই অনুযায়ী নির্মান করা হয় ভবনটি।’
ডাক ভবন সূত্রে জানা গেছে, নবনির্মিত ডাক ভবনের নকশার ধারণা দিয়েছিলেন ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র। সে ধারণা মাথায় রেখেই স্থাপত্যশৈলীর নকশা তৈরি হয়েছে। ডাক ভবনের কাজ প্রায় শেষ। ছোটখাটো কাজগুলো সেরে নেওয়ার চেষ্টা করছেন শ্রমিকরা। এখন অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লগের সভাপতি শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধন করবেন। তিনি সময় মতো ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মোস্তাফা জব্বার বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক ভবনটি উদ্বোধন করবেন। তাঁর সময় হলেই তিনি উদ্বোধন করবেন ভবনটি।