‘কোণঠাসা’ বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দলটি বিভিন্ন সময়ে এক যুগ দেশ শাসন করেছে, অন্যদিকে টানা এক যুগ ক্ষমতার বাইরেও রয়েছে। চার দশকের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিএনপি এখন এক পরিপক্ব রাজনৈতিক দল।
২০০৭ সালের পর থেকে দুই দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতা, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব এবং অসংখ্য মামলায় জর্জরিত এখন দলের নেতাকর্মীরা। এমন এক কঠিন বাস্তবতায় সমালোচকদের তির্যক মন্তব্যের পাশাপাশি রয়েছে সরকারি দলের উপহাস।
কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দল ভাঙার ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে সঠিক সময়েই জবাব দেবে দলটি।
সামরিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রসহ চারটি মূলনীতি নিয়ে ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি নামে রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এর আগে তাঁরই হাতে গড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক দলও (জাগদল) একীভূত হয় নতুন দল বিএনপির সঙ্গে।
১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলা দলটি পরের বছর জয়ী হয় সংসদ নির্বাচনে। ডান, বাম ও মধ্যপন্থী সবার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিএনপি তখন পেয়ে যায় শক্ত রাজনৈতিক ভিত্তি। এটি দলটির প্রতিষ্ঠাতার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বলেই মনে করেন বিএনপির প্রথম কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতই বলুক যে জিয়াউর রহমান সামরিক আইন এনেছেন, তা ঠিক নয়। জিয়াউর রহমানের আগেই দেশে সামরিক আইন এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ঘোষণা করে এসেছিলেন, অচিরেই দেশে সংসদ নির্বাচন হবে। আর সংসদ নির্বাচনের পরপরই সামরিক আইন তুলে নেওয়া হলো। সেই প্রতিজ্ঞা তিনি রেখেছিলেন। জিয়াউর রহমান মনেপ্রাণে গণতান্ত্রিক ছিলেন। সুদূরপ্রসারী রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সফল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিও এই দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়।’
১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী একদল সেনাসদস্যের বুলেটে জিয়াউর রহমান শহীদ হলে দলটির নেতৃত্বে আসেন তাঁর সহধর্মিণী খালেদা জিয়া। অনেকেই মনে করেন, চারবার রাষ্ট্রক্ষমতা এবং দুবার বিরোধী দলে থাকা বিএনপি এখন রাজনীতির ময়দানে অনেকটাই কোণঠাসা। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন আর একাদশ সংসদে যোগদান বিতর্ক মাথায় নিয়ে চলা দলটি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? সমালোচকদের এমন প্রশ্নের জবাব দেন ড. খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এখন কারাগারে, এটা কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের অংশ। বিএনপি প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যে আমরা অবিচল আছি। আমাদের দলের যে বয়স হয়েছে, যতটুকু পরিপক্ব হওয়ার কথা, ততটুকু পরিপক্ব এবং শক্তিশালী আছে। তা না হলে আওয়ামী লীগ আমাদের এতটা ভয় পেত না। আমরা জনগণকে মুক্ত করতে জনগণকে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ এই বাংলাদেশে নেওয়া হবে।’
খন্দকার মোশাররফের মতে, বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র অতীতের মতই ব্যর্থ হবে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই গন্তব্যে পৌঁছাবে বিএনপি।