তালাক দেওয়ায় ঘুমন্ত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা!
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ঘুমন্ত স্বামী নুরুল আমিনকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তাঁর স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ইয়াছমিনকে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শিবলু কুমার দের আদালতে হাজির করা হলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহসান হাবিব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা আশ্রয়ন প্রকল্প ৩-এ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে নুরুল আমিন স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে তালাক দেন। এরপর নুরুল আমিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে এক রুমে আর স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার অন্য রুমে শুয়ে পড়েন। রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ইয়াছমিন বটি দিয়ে নুরুল আমিনের মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেন।
ভোর ৫টার দিকে তাদের মেয়ে তাসমিনা সুলতানা তুহিন (৮) ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের মধ্যে পড়ে আছে। আর মা বাবার পাশে বসে আছে। মেয়ে বাবার এ অবস্থা জানতে চাইলে মা সদুত্তর দিতে পারেনি। পরে মেয়েটি ঘরের বাইরে গিয়ে প্রতিবেশী পাশের ঘরের বাসিন্দা ও মিনিট্রাকের হেলপার মনজুরকে ডেকে তার বাবার অবস্থা দেখায়। মনজুর প্রতিবেশী যুবক ইয়াছিন ও নজরুলকে নিয়ে নুরুল আমিনকে বাশঁখালী আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে তারা সার্জিস্কোপ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নুরুল আমিন মারা যান।
পরে ওই দিনই নিহত নুরুল আমিনের বোন শামসুন্নাহারসহ এলাকার লোকজন লাশ এনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মসজিদের পাশে পাহাড়ের ওপর নুরুল আমিনের লাশ দাফন করে। দাফনের সময় স্ত্রীসহ প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত এলাকাবাসী নুরুল আমিনের মৃত্যুর কারণ স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে ঘরের বৈদ্যুতিক পাখায় আঘাত পেয়ে নুরুল আমিন মারা গেছেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হলে তারা সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিউল কবীরকে বিষয়টি জানান। ওসি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নুরুল আমিনের স্ত্রী ইয়াছমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রাগের বশে স্বামীকে খুনের ঘটনা স্বীকার করেন। পরে ইয়াছমিনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় নুরুল আমিনের বোন শামসুন্নাহার বাদী হয়ে ইয়াছমিন আক্তারকে আসামি করে সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন।
জানা যায়, ১৬ বছর আগে সাতকানিয়া পৌরসভার সামিয়ারপাড়ার আবদুল মাবুদের মেয়ে ইয়াছমিন আক্তারের সঙ্গে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা আশ্রয়ণ প্রকল্প ৩-এর বাসিন্দা মিনি ট্রাক চালক নুরুল আমিনের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় সময়ই পারিবারিক কলহের জের ধরে ঝগড়া হতো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাতকানিয়া থানার এসআই আহসান হাবিব বলেন, নুরুল আমিন মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী, বোন ও সঙ্গে থাকা বন্ধুরা স্থানীয় একটি পাহাড়ে নুরুল আমিনকে দাফন করেন। স্থানীয় লোকজন নুরুল আমিনের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হলে বিষয়টি থানায় গড়ায়। পরে থানার ওসি মো. সফিউল কবীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজন ও স্ত্রী ইয়াছমিনের সঙ্গে কথা বলে। স্ত্রীর কথায় সন্দেহ দেখা দিলে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নিহতের বোন থানায় মামলা দায়ের করলে ইয়াছমিনকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।