ভয়ে এসআই খায়রুলের নাম বলেননি গৃহবধূ
যশোরের শার্শা উপজেলার গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলমের ভয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে তাঁর নাম প্রকাশ করেননি গৃহবধূ। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, এসআই খায়রুল আলম তাঁর নাম প্রকাশ না করার জন্য তাঁকে ঘটনার পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন।
সকালে মেডিকেল প্রতিবেদনে ওই নারীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে হাসাপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
নির্যাতিত ওই গৃহবধূ জানান, এসআই খায়রুল এর আগে তাঁর স্বামীকে একাধিকবার ষড়যন্ত্র করে ফেনসিডিলের মামলায় চালান দিয়েছেন। তাঁর স্বামী আশাদুজ্জামান আশা বেশ কিছুদিন ধরে মাদক ব্যবসা ছেড়ে কৃষিকাজ করছেন বলে তিনি জানান।
গৃহবধূ আরো জানান, এসআই খায়রুলকে বাদ দিয়ে মামলা করার বিষয়ে শার্শা থানা পুলিশের ওসি তাঁকে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ধর্ষণের আলামতের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরই মামলা হবে। বাকি যে তিনজনের নামে মামলা হয়েছে তার মধ্যে কামরুলের নাম তিনি বারবার বলেছেন।
গৃহবধূ আরো বলেন, ‘যখন পুলিশের এসপির সামনে আমাকে ও দারোগাকে মুখোমুখি করা হয় তখন এসআই খাইরুল আমাকে চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখান। ফলে আমি তাঁর নাম বলিনি।’
ওই নারীর এক প্রতিবেশী জানান, ঘটনার দিন এসআই খায়রুল আলম রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি এসে ওই নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করেছেন। আমরা তাঁর বিচার চাই।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু বক্কর জানান, এসআই খায়রুল রাতে নির্যাতিতা গৃহবধূর বাড়িতে এসে তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। আজ তিন দিন হচ্ছে ঘটনা যেমনটি ছিল, আজ শুনছি তা উল্টে গেছে। দারোগা খায়রুলকে বাদ দিয়েই মামলা হয়েছে। দেশে কি আইন বলে কিছু নেই?
গৃহবধূর আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘এসআই খায়রুলসহ গভীর রাতে ওই গৃহবধূর বাড়িতে এসে গণধর্ষণ করলেন কিন্ত দারোগার কোনো বিচার হলো না। এটা আবার কেমন ধরনের ঘটনা? আমরা এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
একই গ্রামের মহিউদ্দিন, কুতুব আলী ও বাবুসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয় ওই গৃহবধূর বাড়িতে। ঘটনা জানতে চাইলে তারা স্পষ্ট বলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবেন না, বললে সমস্যা আছে।
তিন দিন ধরে নির্যাতিত নারীর বাড়ির আশপাশে অচেনা লোকজনদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তবে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আরিফ আহমেদ জানান, ওই গৃহবধূর মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন সিকদার জানান, ওই নারী ও এসআই খায়রুল আলমকে মুখোমুখি করা হলে তিনি খায়রুলকে চেনেন না বলে জানান। তবে খায়রুলের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। যদি তিনি দোষী হন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই নারীর অভিযোগ এসআই খায়রুল ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর নাম না বলার জন্য তাঁকে চাপ দেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছে কী বলেছে সেটা আমার জানা নেই।’
যশোরের শার্শা উপজেলায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে ২ সেপ্টেম্বর রাতে গিয়ে তাঁর স্বামীর মামলা হালকা করার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খায়রুল ও তাঁর সোর্স কামরুল। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। একপর্যায়ে খায়রুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য এলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এসআই খায়রুলকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে আসামি করে শার্শা থানায় একটি মামলা করা হয়। পরে ওই রাতেই পুলিশ তিনজনকে আটক করে। পরের দিন সকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।