ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী, কমিটি ভাঙা নিয়ে গুঞ্জন
নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কেউ সরাসরি কোনো কথা বলতে চাইছেন না।
গতকাল শনিবার দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন অন্তত দুজন নেতা এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা এনটিভি অনলাইনকে জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতেই মূলত গতকালকের যৌথ সভার আয়োজন করা হয়। সভার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। বিশেষ করে তাঁরা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না।’
এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। সম্মেলনের কার্যক্রম দেরিতে শুরু করায় এক ছাত্রলীগকর্মী মারা যায়। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে যান। সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদকেও তাঁরা বসিয়ে রেখেছেন।’
এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমিটি দিতে না পারা, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করার বিষয়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ আসা, কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক বিতর্কিত বিষয় এবং বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করার বিষয়ে সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ সময় ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদপড়া নেতাদের অনশনের কথাও তোলেন আওয়ামী লীগের দুজন জ্যেষ্ঠ নেতা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এ সভায় বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সভায় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’ কমিটি ভেঙে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেলকে ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। আওয়ামী লীগের পরামর্শ ও নির্দেশনায় সংগঠনটি চলে।
শনিবার সভা চলাকালে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও গণভবনে উপস্থিত ছিলেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সভা শেষে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করলেও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পরামর্শে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি।
গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের দুই বছর মেয়াদি কমিটি ঘোষণা করা হয়।